গত বছরের ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় তিনি বক্তব্য প্রদান করলেও প্রকাশ্যে আসতে দেখা যায়নি তাকে।
সম্প্রতি, ‘ভারতে প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার মুখে ড. ইউনূস! দিল্লির মঞ্চে কী বললেন!’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে প্রকাশ্যে এসে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয় বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় শেখ হাসিনার বক্তব্যের একটি পুরোনো ভিডিওর সাথে তার সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া একটি বক্তব্যের অডিও যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শুরুতে উপস্থাপিকা বলছেন ‘ভারতে প্রকাশ্যে শেখ হাসিনা। সরাসরি বক্তব্যে ড. ইউনূসকে নিয়ে সমালোচনা। কী বললেন তিনি!’
এরপর শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘আওয়ামী লীগ নাকি তারা রাখবে না। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিবে। ওরা কী ভেবেছে, আওয়ামী লীগ কি ভেসে এসেছে? না কারো পকেট থেকে বের হয়েছে? ড. ইউনূস ক্ষমতা দখল করেছে একেবারে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে। মানুষ হত্যা করে, মানুষের লাশের ওপর পাড়া দিয়ে।’
শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে এসে এমন বক্তব্য দিয়েছেন কি না- সেবিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, এমনকি বিশ্বস্ত সূত্রে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেশ টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ২৫ জুলাই প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে থাকা শেখ হাসিনার পোশাক এবং সামনে থাকা মাইক্রোফোনের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

উক্ত ভিডিওতে শেখ হাসিনাকে কোথাও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি।
এছাড়া গত জুলাই মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার ক্ষমতা গ্রহণ করেননি, তিনি প্রধান উপদেষ্টা হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন গত বছরের ০৮ আগস্ট। গত জুলাই মাসে শেখ হাসিনাই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
এরপর আলোচিত ভিডিওতে থাকা অডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে গত ২২ মে প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়। সেই বক্তব্যটি আলোচিত ভিডিওতে যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থাৎ, গত বছরের ২৫ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ভবন পরিদর্শন শেষে শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের কিছু অংশ কেটে সেটির সাথে গত ২২ মে শেখ হাসিনার দেওয়া একটি বক্তব্য যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
সুতরাং, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে প্রকাশ্যে এসেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত এই ভিডিওটি সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- Desh Tv- শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি: প্রধানমন্ত্রী
- Prothom Alo- ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী
- My Tv- বিটিভি ভবনের ধ্বংসযজ্ঞ নিজ চোখে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী
- Bangladesh Awami League- Facebook Post