ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শহীদুল আলমের আটক হওয়ার ভুয়া দাবি ইন্টারনেটে

গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে গাজার ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে একটি নৌবহর যাত্রা শুরু করে। এই মিশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীরা অংশ নেন। এর ধারাবাহিকতায়, গত ১ অক্টোবর ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) জাহাজ ‘কনশানস্’ (,,) আন্তর্জাতিক সাংবাদিক এবং চিকিৎসা পেশাদারদের নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এই জাহাজে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমও যোগ দেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি একটি কথিত সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছে যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শহীদুল আলমের আটক অবস্থার ছবি দাবিতে দুইটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টগুলো প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শহীদুল আলমের আটক অবস্থার ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে এই ভুয়া ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও, শহিদুল আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও স্বাভাবিকভাবেই নিয়মিত ‘কনশানস্’ জাহাজের বিষয়ে পোস্ট করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি তার আটক হওয়ার কোনো তথ্য জানা যায়নি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে শহিদুল আলমকে বহনকারী ‘কনশানস্’ জাহাজের গাজায় পৌঁছানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শহিদুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে জাহাজে থাকা অবস্থায় নিয়মিত যাত্রাপথের আপডেট শেয়ার করছেন, তবে গাজায় পৌঁছানোর বা আটক হওয়ার কোনো তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি। তিনি যদি গাজায় পৌঁছাতেন এবং এভাবে প্রকাশ্যে আটক হতেন, তবে এই ঘটনার তথ্য ও ভিজ্যুয়াল মিডিয়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং শহিদুল আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্বাভাবিকভাবেই নিয়মিত পোস্ট হচ্ছে। শহিদুল আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ৬ অক্টোবর দুপুর ১২ টা ৫৯ মিনিটের একটি পোস্ট অনুযায়ী তারা ছোট ও ধীরগতির নৌকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাদের পিছনে ফেলে যেতে চাননি তারা। এ থেকে বুঝা যায় তারা এখনও পৌঁছাননি। এদিকে, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামক ওয়েবসাইটে ‘কনশানস্’ জাহাজের লাইভ ট্র্যাকারে এই প্রতিবেদন লেখার সময় (৬ অক্টোবর, বিকেল ৩টা ৪৯ মিনিট) জাহাজটিকে যাত্রাপথেই দেখা গেছে।

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারারা গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে ছবিগুলো আসল বা সত্য হওয়ার সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে, প্রচারিত ছবিগুলোতে ত্বকের গঠন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থায় অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টে লক্ষ্য করা যায়। 

Collage : Rumor Scanner/Hive Moderation, DeepFake-O-Meter

প্রচারিত ছবিগুলোর বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘হাইভ মডারেশন’ এ আলোচিত ছবিগুলো বিশ্লেষণ করলে ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৮ ও ৯৬.৮ শতাংশ দেখা যায়। এছাড়াও এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ আলোচিত ছবিগুলো বিশ্লেষণ করলে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মটির ‘HIFI’ ও ‘GLFF’ ডিটেক্টরের বিশ্লেষণমতে ছবিগুলো ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা যথাক্রমে ৯৯.২৭ ও ৯৯.৯৯ শতাংশ।

উল্লেখ্য, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কথিত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে আরো নানা ফুটেজের সংযুক্তি পাওয়া যায়, তবে তা আলোচিত দাবির সত্যতা প্রমাণের ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক বলে প্রতীয়মান হয়।

উল্লেখ্য যে, এখন পর্যন্ত শহিদুল আলম বা তাকে বহনকারী ‘কনশানস্’ জাহাজের কাউকে আটক করার খবর পাওয়া না হলেও তাদের আগে যাত্রা করা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজের বহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ থেকে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪৫০ জনকে আটক করে ইসরায়েল। তাদের মধ্যে অনেককে ইতোমধ্যে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ছবিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে শহীদুল আলম আটক হয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img