ভারতের ড্রোন পাকিস্তানের ভূপাতিত করার দৃশ্য দাবিতে থাইল্যান্ডের ভিডিও প্রচার

গত ৬ মে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে একাধিক বিস্ফোরণের খবর মেলে। ভারত দাবি করে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক অভিযানে তারা জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তইয়েবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অন্তত ৯ মে থেকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “ইসরায়েলের তৈরি ভারতের আরেকটি ড্রোন ভূপাতিত করলো পাকিস্তান!”

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: আমার দেশ

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যম ব্যতীত ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উল্লেখ্য যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত বেশিরভাগ পোস্টগুলোতে ভিডিও সৌজন্য হিসেবে “হামিদ মীর” নামক এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি চলমান পাক-ভারত সংঘাতে ইসরায়েলের তৈরি ভারতের ড্রোন পাকিস্তানের ভূপাতিত করার দৃশ্যের নয় বরং, থাইল্যান্ডের আতশবাজির একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার সংবাদমাধ্যম দৈনিক আমার দেশের ফেসবুক পেজে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে ভিডিওটির সৌজন্য হিসেবে হামিদ মীর নামক এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করতে দেখা যায়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘Hamid Mir’ নামক এক পাকিস্তানি সাংবাদিকের এক্স অ্যাকাউন্টে আলোচিত দাবিতে একই ভিডিওটি গত ৯ মে’তে পোস্ট হতে দেখা যায়। কিন্তু, উক্ত পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘จำรัส โลปัดถา’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৭ মে তারিখে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে থাই ভাষায় বলা হয়, “পথ থেকে সরে যাও। আতশবাজি আসছে”। (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত) এছাড়া উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এটি মূলত থাইল্যান্ড থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

এছাড়াও, অনুসন্ধানে “เฮามันไทบ้าน” ও “Nico Thailand” সহ আরো একাধিক থাইল্যান্ড ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেলে একইরকম দৃশ্যের ভিডিও পাওয়া যায় যেখানে হ্যাশট্যাগে ‘কালচার’ বা ‘সংস্কৃতি’র উল্লেখ পাওয়া যায়।

এছাড়াও, অনুসন্ধানে এরূপ দৃশ্যের আরো একাধিক ভিডিও নানা সময়ে অনলাইনে প্রচার হতে দেখা যায়। ২০১৮ সালে ‘Passfire The Fireworks Series’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সদৃশ দৃশ্যের ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়। ভিডিওটির বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটিকে হয় ‘thai turbillions’ বা ‘thai girandolas’ বলা হয়ে থাকে। এটি থাইল্যান্ডের নানা উৎসবে দেখা যায় এবং এক প্রকার আতশবাজি। এছাড়াও, এ বিষয়ে নানাসময়ে আরো একাধিক ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়।

সুতরাং, পাক-ভারত সংঘাতে ইসরায়েলের তৈরি ভারতের ড্রোন পাকিস্তানের ভূপাতিত করার দৃশ্যের ভিডিও দাবিতে থাইল্যান্ডের আতশবাজির দৃশ্য প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img