সম্প্রতি “বিদেশগামী পুরুষ ও মহিলা যাত্রীদের সরকারি ব্যাংকে একাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে আসছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিদেশগামী পুরুষ ও মহিলা যাত্রীদের সরকারি ব্যাংকে একাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক দাবিতে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি সঠিক নয় বরং কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার হয়ে আসছে।
বিদেশগামী পুরুষ ও মহিলা যাত্রীদের সরকারি ব্যাংকে একাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক দাবিতে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমে বিজ্ঞপ্তিটির সূত্রপাত অনুসন্ধান করে।
এক্ষেত্রে ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুলস ব্যবহার করে দেখা যায়, গত ২০ নভেম্বর বিকাল ৫ টা ৫৫ মিনিটে “আমরা সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশী-We Love Singapore” নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে Md Riz Khan (আর্কাইভ) নামের একটি একাউন্ট থেকে সর্বপ্রথম এই বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার করা হয়।
তবে পোস্টটিতে কোথাও কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ দাবিতে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটিতেও কোনো অনুমোদিত কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর বা চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে তথ্যটির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম দেশের একাধিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
এসময় চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিশেষ পুলিশ সুপার, ইমিগ্রেশন শাহীন আহমেদ, বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব ও ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারী পুলিশ সুপার, ইমিগ্রেশন (ওসি, ইমিগ্রেশন) রিউমর স্ক্যানারকে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি তারা পাননি বলে নিশ্চিত করেছেন৷
একইসাথে রিউমর স্ক্যানার টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্স বিভাগের নির্বাহী পরিচালক জি. এম. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
এ প্রসঙ্গে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এ ধরনের কোনো বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেওয়া হয়নি।
এছাড়া কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম Bangla Tribune এ ২০ নভেম্বর “বিদেশ যেতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, চাকরি নিয়ে বিদেশ যেতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক হলেও দেশের যেকোনও ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। তবে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট না খুললে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যাবে না, এমন তথ্যের ভিত্তি নেই।
প্রতিবেদনটিতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শহীদুল আলমকে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়, তাদের কোনও বাধা নেই। বিদেশ গেলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার, যাতে কর্মীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠায়। অ্যাকাউন্ট না থাকলে বিদেশে যাওয়া যাবে না। এখানে সরকারি কিংবা বেসরকারি ব্যাংকের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
মূলত, প্রবাসীরা যাতে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠায় সেজন্য সরকার বিদেশ গেলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক করেছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারি কিংবা বেসরকারি ব্যাংকের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক, দেশের একাধিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ কর্তৃপক্ষও বিদেশগামী পুরুষ ও মহিলা যাত্রীদের সরকারি ব্যাংকে একাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক শীর্ষক দাবিতে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। অর্থাৎ, বিদেশগামী পুরুষ ও মহিলা যাত্রীদের সরকারি ব্যাংকে একাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক দাবিতে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিটি সঠিক নয়।
সুতরাং, বিদেশগামী পুরুষ ও মহিলা যাত্রীদের সরকারি ব্যাংকে একাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক শীর্ষক তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Conversation with Immigration Police, Bangladesh
- Conversation with Bangladesh Bank
- Bangla Tribune: বিদেশ যেতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক