সম্প্রতি শেষ হলো বহুল আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। তার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন সিটি করপোরেশনটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন সহ আরও ছয়জন। গত ২৫ মে সারাদিন এই নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার পর ফলাফল ঘোষণা করা শুরু হয়। নানা কারণে আলোচিত এই নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমসহ নেটিজেনদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। যার প্রভাবে দ্রুত সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে নানা ভুল তথ্য৷
নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে বিজয়ী ঘোষণা
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে নির্বাচনটির রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক ফল ঘোষণার আগেই সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এমন একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

তবে ২৬ মে, রাত ১ টা ২৬ মিনিটে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম যখন নির্বাচনের সবশেষ ফলাফল ঘোষণা করেন, তখন দেখা যায়, সিটি করপোরেশনটির ৪৮০ কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট।

অর্থাৎ, ভোট প্রাপ্তির দিক দিয়ে সিটি করপোরেশনটির নির্বাচনের ৪৮০ কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী, আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করেন জায়েদা খাতুন।
ভোট সংখ্যার ব্যবধান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে গণমাধ্যমে একাধিক ভুল তথ্য
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম ২৫ মে সিটি করপোরেশনটির নির্বাচন শেষে ২৬ মে রাত ১ টা ২৬ মিনিটে সিটি করপোরেশনটির নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন।
এ নিয়ে বেসরকারি সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেল সময় টিভির ফেসবুক পেইজে প্রচারিত লাইভ দেখুন এখানে, জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক মানবজমিনের ফেসবুক পেইজে প্রচারিত লাইভ দেখুন এখানে।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার আগেই দেশীয় কিছু অনলাইন পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জায়েদা খাতুন ও আজমত উল্লা খানের ভোটের ব্যবধান সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আসতে থাকে।
দাবি ১: জায়েদা খাতুন ১৬৯৩০ ভোটে হারিয়েছেন আজমত উল্লা খানকে।

এই দাবির পক্ষে Gazipur City (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেইজে ২৬ মে রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে প্রদত্ত একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, গাজীপুরের মোট ৪৮০ টি কেন্দ্রের মধ্যে সবগুলোর প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী নৌকা মার্কার আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ৭১ হাজার ৭৭ ভোট ও ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ৭ ভোট। অর্থাৎ জায়েদা খাতুন ১৬ হাজার ৯৩০ ভোটে বিজয়ী।

একই সময়ে Gazipur City Update News (আর্কাইভ) নামে আরেকটি ফেসবুক পেইজ থেকেও একই তথ্য প্রচার করা হয়।

এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার পর ২৬ মে সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটে Rip Milestone (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়া, ফেসবুকে প্রচারিত এই তথ্যটি উল্লেখ করেই রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার আগেই রাত ১২ টা ৫৮ মিনিটে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ টাইমস (আর্কাইভ), রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার পরে ২৬ মে সকাল ১০ টা ২২ মিনিটে অনলাইন সংবাদমাধ্যম সোনালী নিউজ জায়েদা খাতুন ১৬৯৩০ বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করে।

দাবি ২: জায়েদা খাতুন ১৬২৪৮ ভোটে হারিয়েছেন আজমত উল্লা খানকে।

এই দাবির পক্ষে The Citizens Voice-নাগরিকের কণ্ঠ (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেইজে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার ফল ঘোষণার একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির শিরোনামে দাবি করা হয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৬২৪৮ ভোটের ব্যবধানে জায়েদা খাতুন বিজয় লাভ করেছেন।
উক্ত দাবিতে ফল ঘোষণার আগেই ২৬ মে রাত ১ টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

পরবর্তীতে ফেসবুকে প্রচারিত এই তথ্যটি উল্লেখ করেই রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার আগেই অনলাইন পোর্টাল বার্তা বাজার (আর্কাইভ) ২৬ মে রাত ১ টা ৮ মিনিটে তাদের ফেসবুক পেইজে জানায়, সিটি করপোরেশনটির ৪৮০ কেন্দ্রের সর্বশেষ বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, ১৬ হাজার ২৪৮ ভোটে জয়লাভ করেছে ঘড়ি মার্কা।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার আগেই গণমাধ্যমগুলো অনির্ভরযোগ্য সূত্রে ভুল তথ্য প্রচার করেছে৷
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জায়েদা খাতুন কত ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন?
গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে এরপরের দিন ২৬ মে, রাত ১ টা ২৬ মিনিটে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন।

তার ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনটির ৪৮০ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। এই হিসেবে তাদের ভোট ব্যবধান দাঁড়ায় ১৬ হাজার ১৯৭ ভোট৷

অর্থাৎ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জায়েদা খাতুন মূলত ১৬ হাজার ১৯৭ ভোট ব্যবধানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খানকে হারিয়েছেন।
মূলত, গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় এবং ২৬ মে রাত ১ টা ২০ মিনিটের পর সিটি করপোরেশনটির নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। তবে তার ফল ঘোষণার আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খানের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রচার হতে থাকে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মেয়র পদে জায়েদা খাতুন ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খানের প্রাপ্ত ভোটের প্রকৃত ব্যবধান ১৬ হাজার ১৯৭ ভোট।
সুতরাং, গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬৯৩০, ১৬২৪৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।