বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর 21, 2023
spot_img

১৯ দিনের বাচ্চাকে বালিশ চাপা দিয়ে মারার ঘটনাটি কাল্পনিক

সম্প্রতি “১৯ দিনের বাচ্চাকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে চার বছরের আরেক শিশু” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও  এখানে। আর্কাইভ  দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯ দিনের বাচ্চাকে বালিশ চাপা দিয়ে চার বছরের আরেক শিশুর মেরে ফেলার ঘটনাটি সত্য নয় বরং এটি একটি কাল্পনিক গল্প যা বাস্তব হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।

কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে নাইশা নিশাত তুলি নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলে গত ১৪ জুলাই প্রকাশিত মূল পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রোফাইলের এই পোস্টটিতে লেখা হয়, “১৯ দিনের বাচ্চাকে বালিশ চাপা দিয়ে মে*রে ফেলেছে চার বছর এর আরেক বাচ্চা। সম্পর্কে ভাই বোন তারা। ১১ দিন পর বাচ্চাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়েছিলো।বড় বাচ্চাটা কিছুতেই ছোট বাচ্চাটাকে মেনে নিতে পারছিলোনা। সবসময় বলছিলো ওকে হাসপাতালে দিয়ে আসো।আরও আত্মীয়রা ওকে মজা করে বলেছের তোমার ভাইকে সবাই আদর করবে তোমাকে আর কেউ ভালোবাসবে না। এই রাগে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে বাবুটাকে। এই জন্য  ছোট বাচ্চাদের একে আপরের সাথে কখনোই কোন তুলনা দেবেন না।তাদের মনে ভালোবাসার কম বেশীর ভয় ঢুকাবেননা। বরং তাদের বুঝাবেন খেলার সাথী পাবে একসাথে খেলতে পারবে,মজা করবে।”

পোস্টটিতে ঘটনার স্থান উল্লেখ না থাকলেও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর কোনো কোনোটিতে স্থান হিসেবে কেবল “পাশের মহল্লাতে” ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মূল পোস্টটিতে ঘটনার সময়কাল সহ আরও বিস্তারিত কোনো তথ্য পোস্টটিতে উল্লেখ করা হয়নি। 

বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে পোস্টদাতা নাইশা নিশাত তুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 

তিনি একটা ছোট ম্যাসেজ দিতে চেয়েছিলেন যাতে বাচ্চাদের মধ্যে ভালোবাসার তুলনা না হয়। আর এ উদ্দেশ্যেই তিনি এটি লিখেছেন। অর্থাৎ এটি একটি কাল্পনিক লেখা।

রিউমর স্ক্যানারের থেকে যোগাযোগের পর নাইশা নিশাত তুলি তার পেজ থেকে লেখাটি সরিয়ে ফেলেন। 

মূলত, নাইশা নিশাত তুলির পেজ থেকে পোস্ট করা একটি কাল্পনিক গল্পকেই বাস্তব ঘটনা হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এদিকে পোস্টটি ফেসবুকে অনেক শেয়ার হতে থাকলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।

আরো পড়ুনঃ তামান্না নামের একটি মেয়ের মৃত্যুর কাল্পনিক গল্পকে বাস্তব ঘটনা হিসেবে প্রচার

বিভ্রান্তির নমুনা

অনেকেই পোস্টগুলোতে কথিত চার বছরের বাচ্চাটি ও তার পরিবারের লোকজনকে দোষী হিসেবে দায়ী করতে দেখা যায়৷ কামরান মনসুর নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, বালিশ চাপা দিলে যে মানুষ মরে, সেই বুদ্ধি তো ৪ বছরের বাচ্চার থাকার কথা না। নিশ্চয়ই কেউ শিখাইছে। 

মুনিরা জান্নাত নামে একজন লিখেছেন, ঐ চার বছরের বাচ্চার নামে থানায় চার্জশিট ফাইল করা হোক। তারপর তাকে জনসম্মুখে কসাই এর মতো জবাই করে দেওয়া হোক। তাহিয়া আক্তার চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন, ঘটনাটা তদন্ত হোক। এমনও হতে পারে অন্য কেউ এমন করে চার বছরের বাচ্চাটাকে ফাঁসিয়েছে। 

১৯ দিনের

আবার কেউ কেউ ঘটনাটিকে বিশ্বাস করে দুঃখ ও সমবেদনাও প্রকাশ করেন৷ হালিমা ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, সত্যিই বেদনা দায়ক ঘটনা। 

সুরাঙ্গনা সুরভী নামে একজন লিখেছেন,  সত্যিই খুব খারাপ ঘটনা, এর জন্য দায়ী আত্মীয় স্বজনরা। ছোট বাচ্চারা খুবই অবুঝ। তাদের সাথে এমন মজা করা একদমই ঠিক না। এমনকি বড়দের সাথেও আচমকা কোনো বিষয় নিয়ে মজা করা উচিত না।

সুতরাং, ১৯ দিনের বাচ্চাকে বালিশ চাপা দিয়ে চার বছরের আরেক শিশুর মেরে ফেলার কাল্পনিক গল্পকে বাস্তব ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

Conversation with নাইশা নিশাত তুলি।

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img