ছাত্র রাজনীতি ইস্যুতে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। রাজনীতি নিষিদ্ধ বুয়েট ক্যাম্পাসে গত ২৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) গভীর রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ সংগঠনটির একদল নেতাকর্মীর প্রবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ উঠে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পরদিন ২৯ মার্চ শুক্রবার আন্দোলনে নামেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। বুয়েটে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে প্রবেশে সহযোগিতা ও রাজনীতি সচলের চেষ্টার অভিযোগে ৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ ৬ দফা দাবি পেশ করেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ওই দিন(২৯ মার্চ) রাতেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশে সহযোগিতার ঘটনায় অভিযুক্ত ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রহিম ওরফে ইমতিয়াজ রাব্বির হলের সিট বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।
বুয়েট প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ৩১ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ শেষে কয়েকশ নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে বুয়েট শহীদ মিনারে ফুল দেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।
পরদিন ১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক হলে সিট বাতিল হওয়া বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রহিমের করা এক রিটের শুনানি শেষে বুয়েট প্রশাসনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্ট।
এদিকে ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত রাখার দাবিতে গত ৩০ মার্চ থেকে টানা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ ছাত্রলীগও। পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীর হলে সিট পুনর্বহালের দাবিতে বুয়েট শহীদ মিনারে অবস্থানসহ চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
এসব কিছুর মধ্যেই গত ২৯ মার্চ বুয়েট শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করা এক নারী শিক্ষার্থীকে জড়িয়ে অনলাইনে বেশকিছু তথ্য ও ছবি প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
বুয়েটের উক্ত নারী শিক্ষার্থীকে জড়িয়ে যেসকল দাবি প্রচার হয়েছে,
১. উক্ত নারী শিক্ষার্থীকে কথিত ‘পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আব্দুল খালেক এর ভাগ্নি, দেবীগঞ্জ উপজেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা উত্তর জামায়াতের সদস্য আব্দুল আউয়াল রাফির ছোট বোন ও ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা সোহরাব হোসেনের মেয়ে মেঘা’ দাবি করা হয়েছে।
২. ওই শিক্ষার্থীর ছবি অন্য একটি ছবির সাথে যুক্ত করে ব্যানার তৈরি করা হয়েছে। এতে হিজাব পরিহিত বর্তমান ছবির সাথে হিজাব পরিহিত নয় এমন একটি ছবিকে ওই শিক্ষার্থীর দুই বছর আগের ছবি দাবি করা হয়েছে।
৩. দুই নারীর চুলোচুলি করার ছবি প্রচার করে এটিকে ওই নারী শিক্ষার্থীর চুলোচুলির ঘটনা দাবি করা হয়েছে।
উপরোক্ত সকল দাবি এক পোস্টে করা হয়েছে এমন পোস্টও অসংখ্য দেখা গেছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন– এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ) ।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মানহানি করার উদ্দেশ্যে বুয়েটের ওই নারীর শিক্ষার্থীর বানোয়াট নাম, পরিচয় ও ঠিকানা প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তার নাম মেঘা নয় এবং তার বাবার নামও সোহরাব হোসেন নয়। হিজাববিহীন যে ছবিটি ওই শিক্ষার্থীর দুই বছর আগের ছবি বলে দাবি করা হয়েছে সেটিও ওই শিক্ষার্থীর ছবি নয় বরং সেটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে ওই শিক্ষার্থীর ছবি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়াও, ভিন্ন দেশের দুই নারীর চুলোচুলির একটি ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে সেটি ওই শিক্ষার্থীর নামে প্রচার করা হয়েছে।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের উপ-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক মুক্তাদির মুক্ত এর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সর্বপ্রথম ওই নারী শিক্ষার্থীকে জড়িয়ে গত ৩০ মার্চ রাত ৮:১৭ মিনিটে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেওয়া হয়।
একই দিন উক্ত পোস্ট পরবর্তী সময়ে Jasmin Sultana Urmi নামের একটি ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত লিখে একটি পোস্ট করা হয়।
পরদিন ৩১ মার্চ জেসমিন সুলতানা উর্মির এই পোস্টের মূল তথ্য অপরিবর্তিত রেখে কিছু বাক্য সংযোজন ও বিয়োজন করে মুক্তাদির মুক্ত নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আরেকটি পোস্ট করা হয়। তবে উর্মির পোস্টে কোনো শিক্ষার্থীর ছবি যুক্ত না থাকলেও এই পোস্টে নারী শিক্ষার্থীর ব্রিফিংয়ের একটি ছবির সাথে উক্ত নারীর ছবি দাবিতে এক হিজাববিহীন নারীর ছবি এবং দুই নারীর চুলোচুলির একাধিক ছবি যুক্ত করা হয়।
উক্ত ছবিগুলো যুক্ত করে পোস্টে লেখা হয়–
“পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আব্দুল খালেক এর ভাগ্নি দেবীগঞ্জ উপজেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি ঢাকা উত্তর জামায়াতের সদস্য আব্দুল আউয়াল রাফির ছোট বোন ও ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা সোহরাব হোসেনের মেয়ে #বুয়েট এর আন্দোলনের একেবারে প্রথম সারিতে।
যে মেয়ে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে থাকতেই অবৈধ বাচ্চা নষ্ট করে ধানমন্ডি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এবং বাচ্চার বাবা তার বয়ফ্রেন্ড নাঈম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলো ধর্ষণের এবং তার বয়ফ্রেন্ড এর ফোনে তার কিছু পার্সোনাল ছবি রয়েছে তা দিয়ে ব্লাকমেইল করছে তার বয়ফ্রেন্ড।
গত ২০-৮-২০২২ ইং বুধবার সকালে ধানমন্ডি থানার এসআই টুটুল ও এসআই (ডিবি) মামুনের সহযোগিতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নাঈম এর ফোন উদ্ধার করতে গেলে নাঈম এর ফোনে কোন প্রকার পার্সোনাল ছবি পাওয়া যায়নি বরং নাঈম কে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ৬ লক্ষ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়।
নাঈম অভিযোগ করে বলেছিলেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলে (***ঘা) কনসেপ্ট করলে আমি তাকে বার বার অনুরোধ করি বাচ্চা নষ্ট না করার জন্য সে আমার কথা না শুনে তার মামাতো বোনের সহযোগিতায় বাচা নষ্ট করে নেয় এই বিষয়ে আমি (****ঘা)র মা কে জানালে ওর আমার আমাকে অকথ্যভাষায় গালাগালি করে এবং তার দুদিন পর আমাদের এলাকার শিবিরের সভাপতি আরিফ,নোমান ও রাসেল কে দিয়ে আমাকে আমার পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি দিলে আমার পরিবার ও আমি ভয়ে এই বিষয়ে চুপ থাকি।
উল্লেখ্য নিষ্পাপ মেয়েটি বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর ৩ টা বয়ফ্রেন্ডের মালিক। বয়ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ডের সাথে চুলোচুলির ভিডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।”
পরবর্তীতে অবশ্য মুক্তাদির মুক্ত আইডি থেকে দুটি পোস্টই ডিলিট (কিংবা প্রাইভেসি অনলি মি) করে ফেলা হয়। তবে তার অ্যাকাউন্টে পোস্টটি বর্তমানে প্রদর্শিত না হলেও ইতিমধ্যে তা কপি-পেস্ট হয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা ছবি ওই শিক্ষার্থীর নামে প্রচার
রিউমর স্ক্যানার টিম ওই নারী শিক্ষার্থীর ছবি দাবি করে প্রচারিত ছবিটি অনুসন্ধান করে দেখেছে সেটি ওই নারী শিক্ষার্থীর কোনো ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে ওই নারী শিক্ষার্থীর নামে প্রচার করা হয়েছে।
ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা এ ছবিকে ওই শিক্ষার্থীর দুই বছর আগের ছবি দাবি করার প্রেক্ষিতে নিম্নে ভুয়া ছবি এবং ওই শিক্ষার্থীর দুই বছর আগের আসল ছবির তুলনা দেখানো হলো-
দুই নারীর চুলোচুলির ভিন্ন দেশের ভিডিওকে ওই নারীর দাবিতে প্রচার
দুজন নারীর চুলোচুলি/মারামারির একটি ভিডিওর স্ক্রিনশট নিয়ে পলাশীর মোড়ে ওই শিক্ষার্থীর সাথে তার বয়ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ডের চুলোচুলির ঘটনার দাবি করে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে ওই ভিডিওটি বাংলাদেশেরই নয়, বরং ভিন্ন কোনো দেশের। অন্তত ২০১৯ সাল থেকে ভিডিওটি বাংলা শিরোনামে ইন্টারনেটে রয়েছে।
ভুয়া নাম, ঠিকানা ও পরিচয় ব্যবহার
ছবি ও ভিডিওর স্ক্রিনশট ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে– নিশ্চিত হওয়ার পর রিউমর স্ক্যানার উক্ত পোস্টে থাকা তথ্যগত দাবি যাচাইয়ের চেষ্টা করে। ফেসবুক পোস্টগুলিতে দাবি করা হয়– ওই শিক্ষার্থীর নাম মেঘা, নানা বাসা পঞ্চগড় এবং বাবার নাম সোহরাব হোসেন।
এ দাবি যাচাইয়ের প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার ওই শিক্ষার্থীর খোঁজ করে এবং তার সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চায়। জিজ্ঞাসার প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারকে ওই নারী শিক্ষার্থী জানায়–
“ক্যাপশনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউই পঞ্চগড়ের না এবং কখনোই সেখানে যাইনি। ক্যাপশনে যাদের নাম বলা হয়েছে তাদের কাউকেই আমি চিনিনা, নামও শুনিনি। প্রেস ব্রিফিং এর ছবিটি ছাড়া বাকি দুইটি ছবির একটিও আমার নয়।”
বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানার টিম ওই নারী শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও সার্টিফিকেটের কপি দেখে নিশ্চিত হয়েছে– তার নাম মেঘা নয় এবং তার বাবার নামও সোহরাব হোসেন নয়। এছাড়াও, তার ডাক নামও মেঘা নয় বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
পোস্টগুলোতে ওই শিক্ষার্থীকে পঞ্চগড়ের এক জামায়াত নেতার ভাগ্নী ও এক শিবির নেতার ছোট বোন দাবি করা হয়। এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী জানান– তার কোনো মামা ও বড় ভাই নেই। এক ছোট ভাই আছেন।
ব্রিফিং করার কারণ বলতে গিয়ে ওই শিক্ষার্থী আরও জানায়– “আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতে। স্কুল কলেজ দুইটাই ছিল ভিকারুননিসা। আমি স্কুল-কলেজে যথেষ্ট ভালো ছাত্রী ছিলাম এবং বিতর্ক, উপস্থাপনা, অলম্পিয়াডসহ সহশিক্ষা কার্যক্রমেও এক্টিভ ছিলাম। বুয়েটেও সহশিক্ষা কার্যক্রমে আমি এক্টিভ। এর আগে বুয়েটের দুইজন শিক্ষার্থী আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনায়ও প্রেস ব্রিফিং আমি করেছিলাম। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সেদিনের প্রেস ব্রিফিং আমি করি। কোন ধরনের পলিটিক্যাল কিছুর সাথে আমার বা আমার পরিবারের কারোরই কোন যোগসূত্র নেই।”
পরবর্তীতে তার বক্তব্যমতো বেইলি রোডের আগুনে নিহত দুই বুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিচার চেয়ে বুয়েট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনেও তার ব্রিফিং করার প্রমাণ পাওয়া যায়।
উক্ত শিক্ষার্থীকে জড়িয়ে পোস্টগুলোতে আরও কিছু দাবি করা হয়– বয়ফ্রেন্ডকে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, বাচ্চা নষ্ট করা, তিনটা বয়ফ্রেন্ড ইত্যাদি।
যেহেতু এই গুজবের সূত্রপাতকারী তার পোস্ট সরিয়ে নিয়েছেন এবং তিনি ওই শিক্ষার্থীর বাবার নাম, তার নানা বাসার ঠিকানা, বড় ভাই থাকার ভুল তথ্য উল্লেখ করেছেন, এমনকি ওই শিক্ষার্থীর সঠিক নামও উল্লেখ করতে পারেননি বরং বানোয়াট নাম-পরিচয়-ঠিকানা ব্যবহার করেছেন, ফলে বাকি তথ্যগুলোও বানোয়াট হিসেবে প্রতীয়মান হয়। যে শিক্ষার্থীর নামই তিনি জানেন না, স্বভাবত তার সম্পর্কে এত গভীর তথ্যও তার জানার কথা নয়। এছাড়াও, বিষয়টি অত্যন্ত ব্যক্তিগত হওয়ায় রিউমর স্ক্যানার টিম আলাদা করে এসব দাবি যাচাইয়ের প্রয়োজন বোধ করেনি।
আমাদের যোগাযোগের পরবর্তীতে সময়ে ওই শিক্ষার্থীর ব্যাচ, তথা বুয়েটের বর্তমান সিনিয়র ব্যাচ Interval 18 এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এ অপপ্রচারের বিষয়ে একটি পোস্ট করা হয়। দাবিগুলোকে ভুয়া উল্লেখ করে লেখা হয়– “সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে সম্পুর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক এবং সম্পুর্ণরূপে ভিত্তিহীন। এটি আমাদের বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভীষণ হতাশাজনক।
নিচের পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রোপাগান্ডা হিসেবে ছড়ানো হচ্ছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। উল্লেখ্য আমাদের এই নারী শিক্ষার্থীর ছবির সাথে জুড়ে দেয়া ছবি, বাবা বা আত্মীয়ের নাম পরিচয় সম্পূর্ণ বানানো। এমনকি তার বাড়িও পঞ্চগড় নয় এবং কোন ধরনের সাংগঠনিক বা নিষিদ্ধ রাজনীতির সাথে সে সম্পৃক্ত নয়।আমাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টায় এই ধরনের জঘন্য মিথ্যাচারকে আমরা ধিক্কার জানাই।”
মূলত, গত ২৮ মার্চ রাজনীতি নিষিদ্ধ বুয়েট ক্যাম্পাসে গভীর রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ সংগঠনটির একদল নেতা-কর্মীর প্রবেশ ও ক্যাম্পাসে তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ উঠে। এর প্রতিবাদে ২৯ মার্চ ৬ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে বুয়েট শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে এই আন্দোলনে গণমাধ্যমের নিকট ৬ দফা দাবির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করা এক নারী শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনকে জড়িয়ে ইন্টারনেটে বেশ কিছু তথ্য ও ছবি প্রচার হতে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে আমাদের অনুসন্ধানে এসব দাবিগুলো ভুয়া ও বানোয়াট বলে প্রতীয়মান হয়। প্রকৃতপক্ষে, চরিত্র হননের চেষ্টা হিসেবেই আলোচিত এই নারী শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে এই তথ্য ও ছবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, কথিত মেঘা নাম দিয়ে বুয়েটের ছাত্ররাজনীতি বিরোধী আন্দোলনে ব্রিফিং করা ওই নারী শিক্ষার্থীর নামে প্রচারিত দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner Analysis
- Statement and documents of that student