ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নৌ-বাহিনী পাঠানোর দাবিটি মিথ্যা 

সম্প্রতি, “ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে নৌ-বাহিনী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ! ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে আমেরিকার পুতুল প্রতিষ্ঠান “জাতিসংঘের” হয়ে কাজ করতে কথিত ‘শান্তি রক্ষায়’নৌ-বাহিনী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ!” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

 নৌ-বাহিনী

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী পাঠানোর  দাবিটি সঠিক নয়। বরং লেবাননে নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউনাইটেড নেশনস ইন্টেরিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউনিফিল) এ অংশ নিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি দল চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ত্যাগ করার সময়কার ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

এ নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ২ মিনিট ৭ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে বলা হয়,’ভিন্ন এক পরিবেশে, একেবারে ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বশান্তি রক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা। তাইতো দায়িত্ব পালনে দেশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার আহবান…..।’ উক্ত ভিডিওটির কোথাও আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে কোনো প্রকার তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা সময় টেলিভিশন এর লোগো ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ১৩ অক্টোবর সময় টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে “লেবানন যাচ্ছেন নৌ বাহিনীর সদস্যরা। Bangladesh Navy। Responsibilities। Somoy TV” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৭৫ সদস্যকে যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়। নৌবাহিনীর এই সদস্যরা লেবাননে মোতায়েনকৃত বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘সংগ্রাম’ এ যোগদান করবেন। উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবস্থান সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে  পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, বাংলাদেশ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (আইএসপিআর) এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গত ১৩ অক্টোবর “লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিফিল এ অংশ নিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৭৫ সদস্যের চট্টগ্রাম ত্যাগ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

অর্থাৎ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যদের লেবাননের বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ সংগ্রাম’ এ যোগদান করার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, ইউনাইটেড নেশনস ইন্টেরিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউনিফিল) জাতিসংঘের একটি শান্তিরক্ষা মিশন। ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে তৈরী ইসরায়েল এবং লেবাননের সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে ইউনিফিল। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ২০১০ সাল হতে লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছে। লেবাননের ভূ-খন্ডে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবার”দ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে দক্ষতার সাথে কাজ করে চলেছে নৌবাহিনী জাহাজ। পাশাপাশি লেবানীজ জলসীমায় উক্ত জাহাজ মেরিটাইম ইন্টারডিকশন অপারেশন, সন্দেহজনক জাহাজ ও এয়ারক্রাফটের উপর গোয়েন্দা নজরদারী, দূর্ঘটনা কবলিত জাহাজে উদ্ধার তৎপরতা এবং লেবানীজ নৌসদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

মূলত, সম্প্রতি লেবাননে নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউনাইটেড নেশনস ইন্টেরিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউনিফিল) এ অংশ নিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৭৫ সদস্যের একটি দল চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ত্যাগ করে। সে সময়ে ধারণকৃত একটি  ভিডিওকেই সাম্প্রতিক ইসরায়েল -ফিলিস্তিন সংঘাতে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। 

সুতরাং, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নৌবাহিনী পাঠানোর দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img