সেনাবাহিনী দেশে নতুন নির্বাচন দেওয়ার কোনো ঘোষণা দেয়নি

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে দিশেহারা হাসিনা, নতুন নির্বাচন দিচ্ছে সেনাবাহিনী শীর্ষক শিরোনাম থাম্বনেইলে উল্লেখপূর্বক একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

সেনাবাহিনী

News Update 24 নামে একটি চ্যানেল থেকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৯ হাজারেরও অধিক বার। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,  বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের নতুন নির্বাচন দেওয়ার কোনো ঘোষণা দেয়নি বরং, অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটিতে কোথাও নতুন নির্বাচন দিচ্ছে সেনাবাহিনী শীর্ষক দাবি সম্পর্কিত কোনো তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি ভিডিওটিতে আলোচিত দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক কোনো তথ্যেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিডিওটি’র থাম্বনেইলে প্রচারিত দাবিটির সাথে বিস্তারিত অংশের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। ১০ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ উপস্থাপন করা হয়েছে। 

 তথ্য যাচাই ০১

ভিডিওর প্রথমে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা ফাস করলো পিনাকী ভট্টাচার্য্য – এই বিষয়ে থাকছে বিস্তারিত প্রতিবেদন

সোশ্যাল একটিভিস্ট ও ব্লগার পিনাকি ভট্টাচার্য তার ইউটিউব চ্যানেল ‘Pinaki Bhattacharya’ এ গতে ৮ জানুয়ারি ‘ইন্তেকাল কমিশনের হাত মারার নির্বাচন || দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ২০২৪’ শিরোনামে বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ  করেন। 

Screenshot Collage: Rumor Scanner

ভিডিওটিতে তিনি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন এবং আওয়ামলীগের অতীত ও বর্তমান নির্বাচন নিয়ে তার নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন।

অর্থাৎ, ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

তথ্য যাচাই ০২ 

আলোচিত ভিডিওতে বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনস অনুষ্ঠান নিয়ে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ডেভিড শুব্রিজ উল্লেখ করে বলা হয়, এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কোনো সত্যিকারের নির্বাচন নয় বলে মন্তব্য করেছেন ডিভিড শুব্রিজ। নির্বাচনের দিন ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা দেওয়া নির্বাচনে ভোট গ্রহন শুরু শিরোনামের প্রভাবশালী বৃটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান একটি প্রতিবেদন শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে ভোট গ্রহন শুরু হয়েছে কিন্তু এটি সত্যিকারের নির্বাচন নয়। 
উক্ত সূত্র ধরে The Guardian এর ওয়েবসাইটে গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ‘Polls open in Bangladesh election guaranteed to hand Sheikh Hasina a fifth term’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গণগ্রেফতারে ইতোমধ্যে বিধ্বস্ত বিরোধী দলগুলো ‘লজ্জাজনক’ নির্বাচন বর্জন করেছে, যে নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বিজয় এনে দেবে।

অর্থাৎ, এই সংবাদের সাথেও আলোচিত দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

মূলত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পূর্ববর্তী ‍সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠুষ্ হয় সে বিষয়ে একাধিকবার বিবৃতি দেয় এবং নির্বাচনে অনিয়ম হলে জড়িত বা দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বলেন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি উল্লেখ করে দেশটির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিলেও  এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশকে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে  “নতুন নির্বাচন দিচ্ছে সেনাবাহিনী” শীর্ষক থাম্বনেইল একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনী বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন দেওয়ার কোনো ঘোষণা দেয়নি। 

সুতরাং, নতুন নির্বাচন দিচ্ছে সেনাবাহিনী শীর্ষক দাবিটি  সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img