সম্প্রতি, কাতার-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) শেখ হাসিনার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় তার বক্তব্য প্রদানে আর কোনো বাধা নেই দাবিতে দুইজন ব্যক্তির হ্যান্ডশেক করার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট এর সাথে সম্পর্কিত কোনো ছবি নয়। বরং, প্যারাগুয়েতে প্যারাগুয়ে ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট থেকে শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেল এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে প্যারাগুয়ের গণপূর্ত ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় MOPC (Ministerio de Obras Públicas y Comunicaciones) এর ওয়েবসাইটে ‘Paraguay y Emiratos Árabes Unidos avanzan en cooperación para infraestructura y transporte’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে অন্যান্য ছবির সাথে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে তারিখ হিসেবে ‘২২ জুলাই, ২০২৪’ উল্লেখ রয়েছে।
জানা যায়, রাষ্ট্রপতি সান্তিয়াগো পেনা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশেমি প্যারাগুয়ের রাজধানী আসুনসিওনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল অবকাঠামো এবং পরিবহন প্রকল্প।
গণপূর্ত মন্ত্রী প্রকৌশলী ক্লডিয়া সেঞ্চুরিয়ানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে পরিবহন, বিমানবন্দর অবকাঠামো এবং জীববৈচিত্র্য করিডোর সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তিগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
আরও জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত বছরের (২০২৪) শেষের আগেই আসুনসিওনে তাদের দূতাবাস খোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
অর্থাৎ, এই ছবির ঘটনার সাথে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট কিংবা শেখ হাসিনার কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া, আলোচিত ছবিটিও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময়েরই।
এছাড়াও, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট শেখ হাসিনার ওপর বক্তব্য প্রদানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবে তাই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি ভিত্তিহীন এবং গুজব।
তাছাড়া, কাতার-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার ওয়েবসাইটেও দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, দেশীয় গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ) গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেন। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে এমন কোনো তথ্য গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, শেখ হাসিনার নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে আল জাজিরা এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টকে জাড়িয়ে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
