কোটা আন্দোলনে বগুড়ায় জেরিন নামের এই শিক্ষার্থী নিহতের গুজব

অন্তত গতকাল থেকে একটি ভিডিও ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের রাস্তা ছোটাছুটি করছেন। এর মধ্যেই কালো পোশাক পরা এক নারী রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। এই ফুটেজটি কোন স্থানের, কত তারিখের এবং উক্ত নারীর বিষয়ে অনেকেই রিউমর স্ক্যানারের কাছে জানতে চেয়েছেন। একই দৃশ্য গত জুলাইয়েও প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। সেসময় এই নারী মারা গেছেন বলেও দাবি প্রচার করা হয়৷ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জুলাইয়ে বগুড়ায় কোটা আন্দোলনে গিয়ে আহত জেরিন নামের শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং তিনি বর্তমানে সুস্থ আছেন বলে নিজেই রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভয়েস অফ বগুড়া নামে একটি ফেসবুক পেজে গত ৩০ আগস্ট একই ভিডিও প্রকাশ করা হয়। মূলত এরপরই ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই এই ঘটনাটি বগুড়ার সাত মাথার মোড় এলাকার বলে দাবি করেন। পরবর্তীতে ফুটেজটি বিশ্লেষণ করে স্থানটি নিশ্চিত হতে কাজ শুরু করে রিউমর স্ক্যানার। গুগল ম্যাপে একই স্থানের সাথে মিলিয়ে দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, এটি বগুড়ার সাত মাথা মোড় এলাকারই দৃশ্য।

Image Comparison: Rumor Scanner 

ঘটনাটি কবের তা জানতে কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখা যায়, গত ১৮ জুলাই উক্ত নারীকে নিয়ে একাধিক পোস্ট (, ) হয় ফেসবুকে। এসব পোস্টে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। জানানো হয়, তার নাম নুসরাত জেরিন। এসবের সূত্র ধরে নুসরাত জেরিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার, যেখানে ৩১ জুলাইয়ের একটি পোস্টে ১৮ জুলাইয়ের ঘটনার একটি ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। জেরিন ২৪ জুলাই এক পোস্টে জানান, “কেউ গুজবে কান দিবেন না আমি বেঁচে আছি। আগের চেয়ে আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছি।”

রিউমর স্ক্যানার জেরিনের সাথে কথা বলেছে। তিনি বলছিলেন, ১৮ জুলাই বগুড়ার সাত মাথা মোড়ে তাদের সাথে পুলিশের তর্ক বিতর্ক হয়। সে সময় তিনি আহত হন। 

রাজধানীর শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির সাবেক এই শিক্ষার্থী জানান, আহত হওয়ার পর প্রথমে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ও পরে জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা নেন তিনি। এখন তিনি সুস্থ আছেন। তবে শরীরে এখনও ক্ষত এবং ব্যথা রয়েছে। 

জেরিন বলছেন, ঠিক কীভাবে তিনি আহত হয়েছেন তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না তিনি। তবে তার কাছে মনে হয়েছে, এটি রাবার বুলেটের আঘাত হতে পারে। জেরিন আমাদের কাছে তার মেডিকেল রিপোর্টগুলো (ব্যক্তিগত তথ্য হিসেবে এই প্রতিবেদনে রিপোর্টের কোনো ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে না) পাঠিয়েছেন। 

দেশের একাধিক চিকিৎসকের কাছে আমরা জেরিনের মেডিকেল রিপোর্টগুলো পাঠিয়েছিলাম। তারা রিপোর্ট দেখে রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, জেরিনের শরীরে রাবার বুলেট লাগে বলেই রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে৷ 

সুতরাং, গত জুলাইয়ে বগুড়ায় কোটা আন্দোলনে গিয়ে আহত জেরিন নামের এক শিক্ষার্থী মারা গেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

  • Statement from Nusrat Jerin
  • Jerin: Medical Report Analysis 
  • Rumor Scanner’s own analysis 

আরও পড়ুন

spot_img