বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধারের দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

Screenshot from Crowdtangle. 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

Screenshot from TikTok.

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

Screenshot from YouTube.

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত দুইটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

Screenshot from Twitter

উক্ত দাবিতে প্রচারিত একটি  টুইট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধারের দাবিটি সত্য নয় বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত গীতার ছবিটি বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ২ দিন আগে থেকেই ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

গত ০৪ এপ্রিল ভোর ছয়টার কিছু পর ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ব্যবসায়ীদের প্রাথমিক হিসাবে, আগুনে পাঁচ হাজারের মতো দোকান পুড়েছে এবং ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি ছবি সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উল্লিখিত দাবির প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানের মাধ্যমে, গত ০২ এপ্রিল অর্থাৎ বঙ্গবাজারে আগুন লাগার দুই দিন পূর্বে ‘Sowrov Mohonto Hira’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ‘হিন্দু_প্রেম_ক্যানভাস_গ্রুপ’ নামের ফেসবুক গ্রুপে করা একটি পোস্টে হুবহু একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশনে সৌরভ মহন্ত হীরা লিখেছেন, “নিজের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা শেয়ার করছি। আমাদের বাড়িতে একবার আগুন লেগেছিল,, সেই আগুনে পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও পুরে যায়নি গীতা টি।”

Screenshot of a Facebook post by Sowrov Mohonto Hira

একই গ্রুপে গতকাল ০৫ এপ্রিল সৌরভ মহন্ত হীরার এই বিষয়ে করা আরো একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অক্ষত গীতা উদ্ধার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে তিনি দ্বিতীয় পোস্টে লিখেছেন, “একটু ভাইরাল হওয়ার জন্য গুজব ছড়িয়ে কি লাভ ভাই। আপনাদের এরকম কাজের জন্য আমাদের মাথা নিচু। কথা বলার জবাব খুজে পাওয়া যায় না। ধীক্কার জানাচ্ছি আপনাদের এরকম কাজের জন্য।”

Screenshot of a Facebook post by Sowrov Mohonto Hira

পরবর্তীতে, ছবিটি সম্পর্কে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিমের তরফ থেকে সৌরভ মহন্ত হীরার সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, “ছবিটি প্রায় একছর আগের। ল্যাপটপের পুরোনো অ্যালবাম ঘাটতে গিয়ে চোখে পড়ায় নিজেদের গ্রুপে ছবিটি শেয়ার করি।” 

সৌরভ মহন্ত হীরা নিজের ধারণকৃত মূল ছবিটি রিউমর স্ক্যানারকে ই-মেইলের মাধ্যমে সরবরাহ করেন। পরবর্তীতে মূল ছবির মেডাটা যাচাই করে দেখা যায়, ছবিটি ২০২১ সালের ০৩ মে তারিখে ধারণ করা হয়েছে। 

Image metadata by Jimpl

মূলত, গত ০৪ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গীতার ছবিটি বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ২ দিন আগে থেকেই ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। এছাড়া ছড়িয়ে পড়া ছবিটির চিত্রগ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ছবিটি ২০২১ সালে চিত্রগ্রাহকের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের সময় ধারণকৃত।

প্রসঙ্গত, বঙ্গবাজারে আগুনের ছাই থেকে অক্ষত অবস্থায় কোরআন শরীফ উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, উক্ত দাবির প্রেক্ষিত রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অক্ষত অবস্থায় কোরআন শরীফ উদ্ধার দাবিতে প্রচারিত গ্রন্থটি হাদিস গ্রন্থ সহিহ বুখারী শরীফ এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল কারী শারহু সহীহুল বুখারী” এর ১০ নং ভলিউম। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।  

সুতরাং, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধারের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img