সম্প্রতি অনলাইন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ৬ ডিসেম্বর : প্রধান উপদেষ্টা”।

উক্ত দাবিতে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ড দেখুন : দৈনিক সকাল, বার্তা বাজার।

এছাড়া, উক্ত শিরোনামে সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
সংবাদমাধ্যম ছাড়াও উক্ত দাবিতে নেটিজেনরাও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। এরূপ পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ আগামী ৬ ডিসেম্বর জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে তিনি বলেছেন নির্বাচনের সবচেয়ে দ্রুততম সময় হতে পারে এ বছরের শেষ নাগাদ। তবে, তিনি কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গণমাধ্যম নাগরিক টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “৬ ডিসেম্বর নির্বাচন, প্রস্তুত ইউনূস সরকার ও নির্বাচন কমিশন” শীর্ষক শিরোনামে গত ১১ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের শেষের দিকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জাপানের এনএইচকে টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে হোক তা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনোভাবেই চান না। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আগামী ৬ ডিসেম্বর গণতন্ত্র দিবসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে, উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়নি যে ৬ ডিসেম্বর তারিখটি প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন।
এ বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা প্রকাশের ওয়েবসাইটে গত ১১ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। পাশাপাশি এই প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, “নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৬ ডিসেম্বর গণতন্ত্র দিবসেই নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে।”
নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ৬ ডিসেম্বর আলোচনায় আসার সূত্রপাতের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, আমার দেশ সংবাদপত্রের গত ১১ ফেব্রুয়ারির মুদ্রণ সংস্করণের ইলেকট্রনিক সংস্করণে “জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ৬ ডিসেম্বর” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপানের এনএইচকে টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইতোমধ্যে বলেছেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। গত রাতে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে তিনি জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে। বিএনপি ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে হোক তা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনোভাবেই চান না। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৬ ডিসেম্বর গণতন্ত্র দিবসে এ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পর ৬ ডিসেম্বর গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।”
এরই সূত্র ধরে জাপান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনএইচকে টেলিভিশনের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করলে “Bangladesh interim leader lays out path ahead” শীর্ষক শিরোনামে গত ৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫ ফেব্রুয়ারিতে এনএইচকে’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনের সবচেয়ে দ্রুততম সময় হতে পারে এ বছরের শেষ নাগাদ।
উক্ত প্রতিবেদনটিতে ড. ইউনূস নির্বাচনের কোনো সম্ভাব্য তারিখ জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদারের সাথে। তিনিও নিশ্চিত করেন, ৬ ডিসেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কোনো মন্তব্য করেননি।
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ আগামী ৬ ডিসেম্বর শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Nagorik TV – ৬ ডিসেম্বর নির্বাচন, প্রস্তুত ইউনূস সরকার ও নির্বাচন কমিশন
- Dhaka Prokash – সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ৬ ডিসেম্বর
- Amar Desh – E-Paper
- NHK World Japan – Bangladesh interim leader lays out path ahead
- Statement of Deputy Press Secretary Mohammad Abul Kalam Azad Majumdar, Chief Adviser
- Rumor Scanner’s analysis