ব্যারিস্টার সুমন র‍্যাবের হাতে গ্রেফতারের গুজব

সম্প্রতি, হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাঁচার আবেদন জানিয়েছেন শীর্ষক থাম্বনেইলের মাধ্যমে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। 

 সুমন র‍্যাবের হাতে

Taj tv নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৬ লক্ষ ৩১ হাজারের অধিক বার।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং, অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটিতে কোথাও ‘ব্যারিস্টার সুমন র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার’ এর দাবি সম্পর্কিত কোনো সংবাদ ও সোর্স উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি ভিডিওটিতে আলোচিত দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক কোনো তথ্যেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিডিওটি’র থাম্বনেইলে প্রচারিত দাবিটির সাথে বিস্তারিত অংশের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

১০ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ভিডিওর শুরুতে যমুনা টেলিভিশনের সংবাদের ফুটেজ হরিজন্টালি ফ্লিপ করে দেখানো হয়। মূল সংবাদে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকার মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এক আসামির গ্রেফতারের সম্পর্কে বলা হলেও প্রচারিত ভিডিওতে তা ব্যারিস্টার সুমনকে গ্রেফতারের দাবিতে দেখানো হয়। এরপর ভিডিওতে কয়েকজন আইনজীবীকে একটি মামলার কপি পড়তে দেখা যায়। এই ভিডিওটি মূলত মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ কর্তৃক ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মানহানির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০০ কোটি টাকা দাবির মামলার। প্রচারিত ভিডিওতে এরপর দেশ টিভির ২০২৩ সালের সংবাদের একটি অংশ দেখানো হয় যা মূলত ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে খুলনা-৪ আসনের সাংসদ সালাম মুর্শেদীর মেয়ে ব্যারিস্টার শেহরিন সালাম ঐশীর দেয়া বক্তব্যের অংশ। 

প্রচারিত ভিডিওতে ২০১৯ সালের একটি ভিডিও যুক্ত করা হয় যেখানে ব্যারিস্টার সুমন সংবাদমাধ্যমের কাছে ধর্ম অবমাননার দায়ে গৌতম কুমার এডবর নামে রাজধানীর ভাষানটেকের এক ব্য‌ক্তির তার বিরুদ্ধে করা মামলার প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন। এরপরই ভিডিওতে এই মামলার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জে মানববন্ধনের একটি ভিডিও দেখানো হয় যা ২০১৯ সালের। কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ফেসবুকে উক্ত মানববন্ধনের কিছু ছবি পাওয়া যায়। 

প্রচারিত ভিডিওতে তারপর একজন উপস্থাপক ব্যারিস্টার সুমনকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবিতে প্রমাণ ছাড়াই কিছু তথ্য দেন। পরবর্তীতে, ভিডিওতে ব্যারিস্টার সুমনের চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি সংসদে বক্তব্য দেয়ার একটি ভিডিও সম্পূর্ণ ভিন্ন দাবিতে ভিন্ন অডিও যুক্ত করে প্রচার করা হয়। সংযুক্ত অডিওটি ব্যারিস্টার সুমনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে গত ১১ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিওর অডিও। এরপরই, সংসদে ২০২২ সালে সংসদে তৎকালীন এমপি হারুন ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যকার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ফুটেজ প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়। এছাড়াও, ব্যারিস্টার সুমনের সংসদে তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার একটি ভিডিওর প্রথমের কিছু অংশ প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়।

একজন সংসদ সদস্য গ্রেফতার হলে তা অবশ্যই মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সাথে প্রচার করা হতো। তবে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যমে এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে Taj tv টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার বিভিন্ন ফুটেজ ব্যবহার করে ভুয়া এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, র‍্যাবের হাতে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img