প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচন না করার গুজব 

গত ২৩ ডিসেম্বর Viral News Today নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘শেখ হাসিনার অধিনে নির্বাচন করবে না সিইসি, পিটার হাসের ভারত সফরের রহস্য’’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

 সিইসি

ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে সাড়ে ৬ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে প্রায় দেড় হাজার বার, মন্তব্য করা হয়েছে অর্ধ শতাধিক।

পরবর্তী আরেকটি পেজ থেকে ভিডিওটি প্রচার করা হয়। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন না করার কোনো ঘোষণা দেননি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন না করার ঘোষণা দেওয়ার কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি। ভিডিওটিতে সংবাদপাঠ অংশের পর বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। এছাড়াও ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালের পুরোনো কিছু ছবি দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচন করবেন না প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন না হলে এর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”

এবিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটি’র সত্যতা পাওয়া যায়নি।

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Rumeen Farhana’s Voice নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৩ ডিসেম্বর ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত ভারতে গেলেন কেন? ৭ তারিখের আগেই কি তাহলে সরকারের পতন হচ্ছে?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Rumeen Farhana’s Voice

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র রুমিন ফারহানার বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই ভিডিওটিতে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের চলমান ভারত সফরের বিষয়ে তার ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করেন এবং এর সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দাবির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

তাছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’র অনলাইন সংস্করণে গত ২২ ডিসেম্বর ‘বড়দিনের ছুটি কাটাতে দিল্লি গেলেন পিটার হাস’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বড়দিনের ছুটি কাটাতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর  দিল্লিতে যান। কূটনৈতিক সূত্রগুলো ওইদিন সন্ধ্যায় বড়দিনের ছুটির সময় পিটার হাসের ঢাকার বাইরে থাকার তথ্য নিশ্চিত করেছে। তিনি সস্ত্রীক সকালে দিল্লি গেছেন বলে বিমানবন্দর সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আলোচিত ভিডিওটি’র শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে পিটার হাসের ভারত সফরের রহস্য ফাঁস হওয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে পিটার হাসের ভারত সফরের উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো সূত্রে জানা যায়নি।

অর্থাৎ, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত বিষয়গুলো সঠিক নয়।

মূলত, বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যও দিয়েছেন। এরমধ্যে গত ২২ ডিসেম্বর পিটার হাস সস্ত্রীক ভারত সফরে যান। তার এই সফরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাম্প্রতিক বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েও ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ডিসেম্বর Viral News Today নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘শেখ হাসিনার নির্বাচন করবে না সিইসি, পিটার হাসের ভারত সফরের রহস্য ফাঁস’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়,  উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করবেন না দাবি করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ ও পুরোনো ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষনে এই ঘোষণা দেন তিনি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন করবেন না শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img