সংসদে গণধোলাইয়ের শিকার হননি ব্যারিস্টার সুমন

সম্প্রতি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ”সংসদে সুমনকে গণধোলাই দিলো | প্রধানমন্ত্রীর সামনেই মারামারি শুরু”

সংসদে গণধোলাই

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি ১৬ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ৪৬ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সাথে কারোরই মারামারি হয়নি। বরং কোনোরকম তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই অপ্রাসঙ্গিক ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি প্রচারিত হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে সম্পূর্ণ ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সম্পূর্ণ ভিডিওতে কোথাও ব্যারিস্টার সুমনের সাথে কারোর মারামারির কোনো দৃশ্য নেই। প্রচারিত ভিডিওটিতে সর্বপ্রথম মূলধারার গণমাধ্যম ডিবিসি নিউজের একটি ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। উক্ত ভিডিওটিতে ব্যবহৃত ফুটেজের সাথে ২০২৪ সালের ২৯ জুন তারিখে “মালদ্বীপে মন্ত্রীসভার পরিধি বাড়ানো ইস্যুতে সংসদে মারামারি | DBC News” শিরোনামে ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিও সংবাদ প্রতিবেদনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison : Rumor Scanner

ডিবিসি নিউজের উক্ত ভিডিওটি দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, আলোচিত ভিডিওটি মালদ্বীপের সংসদে মন্ত্রীসভার পরিধি বাড়ানো ইস্যুতে মারামারি হওয়া নিয়ে প্রচার করা সংবাদের দৃশ্য। এখানে ব্যারিস্টার সুমনের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। 

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ব্যবহৃত দ্বিতীয় ফুটেজটির স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে “উত্তপ্ত মালদ্বীপের পার্লামেন্ট; সংসদের ভেতর মারামারি! | Maldives Parliament Clash | Jamuna TV” শিরোনামে প্রকাশিত আসল সংবাদ প্রতিবেদন ভিডিওটি মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে খুঁজে পাওয়া যায়। যমুনা টিভির আসল ভিডিওটিও মালদ্বীপের সংসদে মারামারি হওয়া নিয়ে করা সংবাদ প্রতিবেদনের ভিডিও। অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ব্যবহৃত দ্বিতীয় ফুটেজটির সাথেও বাংলাদেশ সংসদ কিংবা ব্যারিস্টার সুমন কারোরই কোনোরকমের সম্পৃক্ততা নেই। 

Comparison : Rumor Scanner

অতঃপর, দাবিকৃত ভিডিওটিতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সাবেক সাংসদ পাপিয়ার বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত দাবির সাথে অপ্রাসঙ্গিক একটি ভিডিও যুক্ত করে প্রচার করা হয় যার সাথেও ব্যারিস্টার সুমনের কোনোরকমের সম্পৃক্ততা নেই। 

সবশেষে চ্যানেল২৪ এর লোগো ব্যবহৃত ভিডিওটিতে দেখা যায়, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে কোনো এক বিষয় নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হলে কিছু সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। উক্ত বিষয়ের মূল প্রসঙ্গ খুঁজে পেতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি অবলম্বন করে অনুসন্ধান করলে চ্যানেল২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে “সংসদ থেকে জাতীয় পার্টির ওয়াকআউট | JAPA | Sangsad | Channel 24” শিরোনামে মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির শিরোনাম পড়ে জানা যায়, এটি ২০২৩ সালের জুনে সংসদ থেকে জাতীয় পার্টির ওয়াকআউট করার দৃশ্যের ভিডিও।

অতঃপর, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে উক্ত কার্যক্রমের মূল প্রসঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের ২১ জুন তারিখে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে “সংসদ অধিবেশন থেকে জাতীয় পার্টির ওয়াকআউট” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২১ জুন তারিখে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন বিলের বিরোধিতা করে সংসদ অধিবেশন থেকে জাতীয় পার্টির এমপিরা ওয়াকআউট করেছেন। অর্থাৎ, উক্ত বিষয়েও ব্যারিস্টার সুমনের কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, পুরো ভিডিওটির কোথাও ব্যারিস্টার সুমনের সাথে মারামারির কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ প্রদর্শিত হয়নি। তবে, ভিডিওটির থাম্বনেইলে ও ভিডিওর মধ্যবর্তী অংশে একটি মারামারির স্থিরচিত্রে ব্যারিস্টার সুমনের মুখমন্ডলের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি অবলম্বন করে উক্ত ছবিটির মূল উৎসের সন্ধান করলে ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে ২০২৪ সালের ২৮ জুন তারিখে “Video: Maldives parliament erupts in chaos as lawmakers clash in key session” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ছবি দুইটি তুলনা করার সুবিধার্থে মিরর করে তুলনা করলে ছবি দুইটির মধ্যে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে মালদ্বীপের সংসদে ঘটা মারামারির আসল ঘটনার ছবিটি সম্পাদনা করে সেটিতে ব্যারিস্টার সুমনের মুখমণ্ডল যুক্ত করা হয়েছে। 

Comparison : Rumor Scanner

অধিকতর নিশ্চিত হতে, মূলধারার গণমাধ্যমে অনুসন্ধান করেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ভেতরে ব্যারিস্টার সুমনের সাথে কারোর মারামারি হওয়ার স্বপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মালদ্বীপের সংসদে হওয়া মারামারির সংবাদ ও ছবি সম্পাদনা করে এবং অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও ফুটেজ সংযুক্ত করে কোনোরকমের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই দাবি করা হচ্ছে সংসদে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সাথে মারামারি ঘটেছে। 

অর্থাৎ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ব্যারিস্টার সুমনকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে মর্মে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img