জি এম কাদের কর্তৃক নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক মির্জা ফখরুলের মুক্তির ভুয়া দাবি

গত ০২ জানুয়ারি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবের কয়েকটি চ্যানেলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ (সদর) আসনের প্রার্থী (লাঙ্গল) ‘জিএম কাদের নিজেই প্রার্থী প্রত্যাহার করলো, সেনাবাহিনী মাঠে নেমেই ফখরুলকে মুক্তি দিলো’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

জিএম কাদের

ভিডিওগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি এ বিষয়ে সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় ১ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের তার নির্বাচনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি এবং সেনাবাহিনী মাঠে নেমে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্তি দেওয়ার দাবিটিও সঠিক নয় বরং নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী বর্তমানে নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল গত ১৭ ডিসেম্বর।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও। তবে উক্ত ভিডিওটিতে কোথাও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ (সদর) আসনের প্রার্থী (লাঙ্গল) জিএম কাদের কর্তৃক দলটি’র কোনো প্রার্থীকে প্রত্যাহার ঘোষণার দৃশ্য দেখানো হয়নি এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্তি দেওয়ারও কোনো দৃশ্য দেখানো হয়নি। তাছাড়া উক্ত দাবিগুলোর পক্ষে ভিডিওটিতে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণও উপস্থাপন করা হয়নি।

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল ২৪’ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত  ০২ জানুয়ারি ‘নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি থাকবে কিনা জানালেন জিএম কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো জিএম কাদেরের বক্তব্যের অংশের মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

সেখানে তিনি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সেখানে তাকে জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী প্রত্যাহার ঘোষণা করতে দেখা যায়নি।

জাতীয় পার্টির কয়েকটি আসনের প্রার্থীদের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে জিএম কাদের বলেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহার হুমকির কারণেও হতে পারে, অর্থের অভাবেও হতে পারে। অনেক প্রার্থী অর্থশালী হয়ে থাকেন না, অর্থের কারণেও অনেকে নির্বাচন থেকে সরে যান।

জাতীয় পার্টির নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা সে বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন না আসা পর্যন্ত সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকব কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত দাবির মিল নেই।

এছাড়াও, মূলধারার গণমাধ্যম ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’র অনলাইন সংস্করণে গত ০২ জানুয়ারি ‘যারা না জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : জিএম কাদের’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনে দলটির মনোনীত কয়েকজন প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে জিএম কাদেরের বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, যারা দলকে না জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়াও আলোচিত ভিডিওটিতে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেই বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্তি দেওয়ার দাবি করা হলেও জানা যায়, উক্ত দাবিটি সঠিক নয়। কেননা আলোচিত ভিডিওটি প্রচার হওয়া আগ পর্যন্ত (গতকাল) সেনাবাহিনী মাঠে নামেনি বরং আজ (বুধবার) থেকে সেনাবাহিনী মাঠে নামবে।

তাছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইন সংস্করণে আজ (০৩ জানুয়ারি) ‘এক সপ্তাহ পেছালো মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন শুনানি এক সপ্তাহ পিছিয়েছেন হাইকোর্ট। মির্জা ফখরুলের এক আইনজীবীর সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার (৩ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।

অর্থাৎ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন পর্যন্ত কারাগার থেকে মুক্তি পাননি।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ ডিসেম্বর ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। সেসময়ের মধ্যে জাতীয় পার্টির ১১ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। 

মূলত, সম্প্রতি গাজীপুর-১ ও ৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন। এছাড়াও গত ৩১ ডিসেম্বর বরিশাল-২ এবং বরিশাল-৫ আসন ও  বরগুনা-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও নিজের নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন। পাশাপাশি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ ০৩ জানুয়ারি থেকে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী। এসবের প্পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ‘সারাদেশ থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রত্যাহার হঠাৎ বিএনপিতে যোগ দিল জাতীয় পার্টি’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তফসিল অনুযায়ী বর্তমানে নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল গত ১৭ ডিসেম্বর। এছাড়া, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সেনাবাহিনী কর্তৃক মির্জা ফখরুলকে মুক্তি দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই এবং এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি।

উল্লেখ্য, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সুতরাং, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের কর্তৃক দলটি’র প্রার্থী প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img