ডাকসু নির্বাচনে ভোট চুরি করতে গিয়ে ঢাকা কলেজ শিবির সদস্য আটকের দাবিটি ভুয়া

গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। যাতে ভিপি, জিএস ও এজিএস এবং ১২টি সম্পাদক পদের মধ্যে ৯টিতে জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ প্রার্থীরা। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা। এর আগেই ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টা ২১ মিনিটে কাঁঠেরকেল্লা নামের ফেসবুক পেজে করা একটি পোস্টের মাধ্যমে দাবি করা হয় ডাকসুতে ভোট চুরি করতে গিয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রশিবিরের তাহমিদ বিন সাইফ নামের এক সদস্য আটক হয়েছেন। 

পোস্টটিতে শাহবাগ থেকে সন্দেহভাজন ব্যক্তির আটিক হওয়া নিয়ে দৈনিক যুগান্তরে প্রচারিত ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট দেওয়া হয়েছে। যাতে আটক ব্যক্তিকে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। পোস্টটিতে দাবি করা হয়েছে, আটক ওই ব্যক্তিই তাহমিদ বিন সাইফ। এর পাশাপাশি পোস্টটিতে সাইফের প্রোফাইলে করা তিনটি পোস্টের স্ক্রিনশটও দেওয়া হয়েছে। যাতে তার সাথে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। 

কাঁঠেরকেল্লার ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডাকসু নির্বাচনে ভোট চুরি করতে গিয়ে তাহমিদ বিন সাইফ নামের ঢাকা কলেজ ছাত্রশিবিরের কথিত সদস্য আটক হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ডাকসু নিবার্চনের ভোটগ্রহণ চলাকালীন শাহবাগ থেকে আটক এই তরুণের নাম সালমান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের ছাত্র বলে জানা যায়। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টে ব্যবহৃত দৈনিক যুগান্তরের স্ক্রিনশটের ভিডিওটি খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দৈনিক যুগান্তরের পোস্টের কোথাও আটক ব্যক্তির নাম ও পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। 

Screenshot: Facebook

পরবর্তীতে Tahmid Bin Saif এর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩ টা ১৩ মিনিট এবং ৩ টা ৪০ মিনিটে আপলোড করা দুটি ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। ভিডিওগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। উভয় ভিডিওতেই তিনি কাঁঠেরকেল্লা নামের পেজটি থেকে তার আটক হওয়ার বিষয়ে করা পোস্ট নিয়ে কথা বলেন। ভিডিওগুলোর মাধ্যমে তিনি জানান, শাহবাগে আটক তরুণ তিনি নন। এছাড়াও ওই তরুণের সাথে তার কোনো যোগসূত্র নেই। পাশাপাশি তিনি বলেন, সে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সদস্য কিন্তু তিনি তার কলেজ অর্থাৎ, ঢাকা কলেজ ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত নয়। তাছাড়াও তিনি জানান, তিনি বর্তমানে তার নিজ জেলা নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছেন, ঢাকাতে নয়। 

পাশাপাশি তাহমিদ বিন সাইফের চেহারার সাথে শাহবাগ থেকে আটক তরুণের চেহারার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেও তাদের চেহারার পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। 

Comparison by Rumor Scanner

পরবর্তীতে শাহবাগে আটক তরুণের বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক আমার দেশআজকের প্রতিদিন নামের দুটি গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটে আটক তরুণের বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, আটক তরুণের নাম সালমান। তিনি নিজেকে ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের ছাত্র বলে দাবি করেন। 

Screenshot: Amar Desh

প্রতিবেদনগুলো থেকে আরও জানা যায়, সালমান দাবি করেন তিনি গত দুইদিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন। প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র ফটোকপি এবং প্রিন্ট করার জন্য নীলক্ষেত যান। পরবর্তীতে নীলক্ষেত পয়েন্ট দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে তার তথ্যের গরমিল পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল টিম তাকে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য কার্ড দেখাতে বলেন। সেসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীর কার্ড দেখিয়ে এবং ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী রাকিব গাজীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।

রাকিব হোসেন গাজী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেলের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন। 

সালমান নামের ওই তরুণের আটক হওয়ার বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও সেগুলোতে তার এবং প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়নি। এমন প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে। 

অর্থাৎ, শাহবাগে আটক সালমানকে ভোট চুরির অভিযোগে আটক করা হয়নি এবং তার সাথে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী তাহমিদ বিন সাইফের কোনো সম্পর্ক নেই।

সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোট চুরি করতে গিয়ে তাহমিদ বিন সাইফ নামের ঢাকা কলেজ ছাত্রশিবিরের কথিত সদস্য আটক হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img