সমন্বয়কদের পিটিয়ে আওয়ামী লীগের গুলিস্তানের সমাবেশস্থল দখল দাবিতে ভুয়া ভিডিও

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ০৫ আগস্ট ক্ষমতা হারায় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। গত ০৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিজেদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে ঢাকার জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এদিকে আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি প্রতিহত করতে একইদিন একই স্থানে গণজমায়েতের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরই প্রেক্ষিতে ১০ নভেম্বর “সমন্বয়কদের পিটিয়ে সমাবেশস্থল দখলে নিলো আওয়ামী লীগের লাখো নেতাকর্মী” শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি ৪ লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় দেড় হাজার মন্তব্য করা হয়েছে। ভিডিওটির মন্তব্যঘর ঘুরে অধিকাংশ নেটিজেনকে উক্ত দাবির পক্ষে মতামত দিতে দেখা যায়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ভিডিওটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমন্বয়কদের ওপর হামলা করে গুলিস্তানের সমাবেশস্থল দখলে নেওয়ার ঘটনার নয় বরং, চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক পুরোনো ভিডিও ও ছবি যুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটির শুরুতে একদল যুবককে চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি করতে দেখা যায়। এরপর লাঠি হাতে স্লোগান দিতে দেখা যায় কয়েকজন যুবককে। আলোচিত ভিডিওটিতে সমন্বয়কদের পিটিয়ে আওয়ামী লীগ কর্তৃক সমাবেশস্থল দখলে নেওয়ার দাবি প্রচার করা হলেও ভিডিওটির বিস্তারিত অংশে তেমন কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।

দাবিটি যাচাইয়ে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা প্রাসঙ্গিক ভিডিও ফুটেজগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই-১

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘এনটিভি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের পহেলা জুন ‘চট্টগ্রামে ১৪ দলের সমাবেশে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, চেয়ার ছোড়াছুড়ি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির শুরুর অংশের মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

জানা যায়, এটি ২০২৩ সালের পহেলা জুন ‘চট্টগ্রামে ১৪ দলের সমাবেশে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিও।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আওয়ামী লীগের কর্মসূচির নয়, এটি ২০২৩ সালের পুরোনো ভিডিও।

ভিডিও যাচাই-২

আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম ইত্তেফাক এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ‘লাঠি হাতে আওয়ামী লীগের সমাবেশ স্থলে নেতাকর্মীরা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির দ্বিতীয় ফুটেজের মিল পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

জানা যায়, এটি ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সমাবেশেস্থলে নেতাকর্মীদের লাঠি হাতে স্লোগান দেওয়ার সময়ে ধারণকৃত ভিডিও।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আওয়ামী লীগের কর্মসূচির নয়, এটি ২০২৩ সালের পুরোনো ভিডিও।

এছাড়াও, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগ কর্তৃক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ওপর হামলার কোনো তথ্য বা সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তবে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘটনায় ০৯ নভেম্বর রাতে দুজনকে ছাত্রলীগের কর্মী সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রতিহত করতে আসা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।

তাছাড়া, গতকাল (১০ নভেম্বর) জিরো পয়েন্ট এলাকায় আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে নারীসহ বেশ কয়েকজনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন বিএনপি ও যুবদলের কর্মীরা। এছাড়াও রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘জয় বাংলা’স্লোগান দিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন এক প্রবীণ।

সুতরাং, শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমন্বয়কদের ওপর হামলা করে সমাবেশস্থল দখলে নিয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img