জিয়াউর রহমানের মাজারে আওয়ামী লীগ নেতার লাশ ঝুলিয়ে রাখার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, আওয়ামী লীগের কথিত এক নেতাকে হত্যা করে তার লাশ রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে অবস্থিত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে দাবিতেও একই ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায়। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি হত্যাকাণ্ডের শিকার কোনো লাশের নয়। জিয়াউর রহমানের মাজারে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া ওই ব্যক্তি মারা যাননি। এছাড়াও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। বরং, মোবাইল চুরির অভিযোগে ধরা পড়ার পর গণপিটুনি এড়াতে তিনি অভিনব কৌশলে সেখানে ঝুলে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। 

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম Bangladesh News Express এর ফেসবুক পেজে গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওটিও জিয়াউর রহমানের মাজারে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া ওই ব্যক্তিকে নিয়ে। তবে প্রাপ্ত ভিডিওটি ভিন্ন এঙ্গেল থেকে ধারণ করা হলেও উভয় ভিডিওতে একই ব্যক্তিকে একই পোশাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া ব্যক্তি মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে গণপিটুনির হাত থেকে রক্ষা পেতে অভিনব পদ্ধতিতে জিয়াউর রহমানের মাজারের উপর ঝুলে পড়েন। পরবর্তীতে তার কাছে থাকা একটি ছুরি দিয়ে নিজেকে আঘাত করেন ও আত্মহত্যার হুমকি দেন। এসময় কৌশলে কয়েকজন তাকে সেখান থেকে জীবিত অবস্থায় নামিয়ে আনতেও সক্ষম হন বলে জানা যায়। পাশাপাশি এই পুরো ঘটনাটি ভিডিওতেও দেখা যায়। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আলোচিত ভিডিও কোনো লাশের নয়। 

অনুসন্ধানে গত ১৯ তারিখেও একই দাবিতে ভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ ঘটনার ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায়।  

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আরেক অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম bdnews24 এর ওয়েবসাইটে এ ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান প্রতিবেদনকে বলেন, “সেখানে কেউ একজন আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। পরে লোকজন তাকে অনুরোধ করে নামিয়ে আনে। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে পুলিশ খোঁজ নিচ্ছে, তার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।”

এছাড়া অনুসন্ধানে অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে আলোচিত ওই ব্যক্তির রাজনৈতিক সংশৃষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও তিনি জীবিত আছেন এটি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। 

সুতরাং, জিয়াউর রহমানের মাজারে বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের কথিত নেতাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img