সম্প্রতি, “বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সংযুক্ত করা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদ, সেক্যুলারিজম এবং ইসলাম কে বাদ দেওয়া হচ্ছে!” শীর্ষক দাবিতে নতুন বছরের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যক্রমে বিতর্কিত পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে ফেসবুকে বেশকিছু তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
উক্ত পোস্টগুলোতে ২০২৩ সালের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে ১৬ টি বিষয় বাদ দেয়া এবং নতুন করে ১২ টি বিষয় প্রবেশ করানো হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আলোচিত দাবিগুলোর মধ্যে থাকা ০৮ টি দাবিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। বাদ বাকি ২০ টি দাবি নিয়েই রিউমার স্ক্যানারের এবারের আয়োজন।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন বছরের(২০২৩) পাঠ্যক্রমে বিভিন্ন শ্রেণির বই হতে ইসলামিক গল্প/প্রবন্ধ/কবিতা/ভ্রমণ কাহিনী/জীবনী বাদ দিয়ে হিন্দুধর্ম ও সেক্যুলারিজম সম্পর্কিত গল্প/প্রবন্ধ/কবিতা/ভ্রমণ কাহিনী যুক্ত করা হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে যে তথ্যগুলো প্রচার করা হচ্ছে সেগুলোর অধিকাংশই মিথ্যা বরং যেসকল ইসলামি গল্প/প্রবন্ধ/কবিতা/ভ্রমণ কাহিনী/জীবনী বাদ দেওয়া হয়েছে বলে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে সেগুলোর অধিকাংশই বর্তমান পাঠ্যবই রয়েছে। এবং হিন্দুত্ববাদী যেসকল গল্প/প্রবন্ধ/কবিতা যুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেগুলো বর্তমান পাঠ্যক্রমেই নেই। তবে, ২০২৩ সালে সালের ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বই থেকে ড. মুহম্মদ শহীদু্ল্লাহর ‘সততার পুরুস্কার’ নামক গল্প, সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ নামক ভ্রমণ কাহিনী এবং সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই হতে কাজী নজরুল ইসলামের ‘মরুভাস্কর’ নামক কাব্যগ্রন্থ বাদ দেওয়ার দাবি সত্য। এই তিনটি বিষয় ২০২২ সালের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, হিন্দু ধর্ম সম্পর্কিত যেসব গল্প/কবিতা/প্রবন্ধ পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেগুলো ২০১৭ সালের পূর্বে পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত ছিল। তবে এগুলো বর্তমান পাঠ্যবইয়ে নেই বরং ২০১৭ এগুলো এনসিটিবির পাঠ্যবই হতে বাদ দেয়া হয়েছে।
প্রথম দাবি যাচাই
দাবি
পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বই হতে বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী কাদের নেওয়াজের লিখিত ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক একটি কবিতা।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উক্ত কবিতাটি পাঠ্যবই হতে বাদ দেওয়া হয়নি বরং এনসিটিবির বর্তমান পাঠ্যক্রমের পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ৮১ পৃষ্ঠায় কাজী কাদের নেওয়াজের লিখিত ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক কবিতাটি বিদ্যমান রয়েছে।
দ্বিতীয় দাবি যাচাই
দাবি
পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বই হতে ‘শহিদ তিতুমীর’ নামক প্রবন্ধ বাদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত প্রবন্ধটি পাঠ্যবই হতে বাদ দেওয়া হয়নি বরং এনসিটিবির বর্তমান পাঠ্যক্রমের পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ১১৫ পৃষ্ঠায় ‘শহিদ তিতুমীর’ নামক প্রবন্ধটি রয়েছে।
তৃতীয় দাবি যাচাই
দাবি
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বই হতে ড. মুহম্মদ শহীদু্ল্লাহ লিখিত ‘সততার পুরুস্কার’ নামক গল্প বাদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত গল্পটি ষষ্ঠ শ্রেণির বর্তমান বাংলা বই হতে বাদ দেওয়ার দাবি সত্য। ষষ্ঠ শ্রেণির ২০২৩ সালের বাংলা বইয়ে ড. মুহম্মদ শহীদু্ল্লাহ লিখিত ‘সততার পুরস্কার’ গল্পটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। যা বিগত বছরে ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠ(বাংলা) বইয়ে ছিল।
চতুর্থ দাবি যাচাই
দাবি
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বই হতে – ‘নীল নদ আর পিরামিডের দেশ’ নামের ভ্রমণ কাহিনী বাদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ভ্রমণ কাহিনীটি ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বই হতে বাদ দেওয়ার দাবি সত্য। ষষ্ঠ শ্রেণির ২০২৩ সালের বাংলা বইয়ে সৈয়দ মুজতবা আলী লিখিত ‘নীল নদ আর পিরামিডের দেশ’ নামের ভ্রমণ কাহিনী খুঁজে পাওয়া যায়নি। যা বিগত বছরে ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠ(বাংলা) বইয়ে ছিল।
পঞ্চম দাবি যাচাই
দাবি
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বই হতে মুসলিম সাহিত্যিক কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ নামক কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট
কায়কোবাদের প্রার্থনা কবিতাটি বিগত বছরে ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠ(বাংলা) বইতে ছিল না বরং অনেক বছর ধরেই অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা(বাংলা) বইতে ছিল এবং ২০২৩ সালের অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা(বাংলা) বইতেও আছে।
ষষ্ঠ দাবি যাচাই
দাবি
সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই হতে ‘মরুভাস্কর’ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত বাদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে জানা যায়, হাবিবুল্লাহ বাহার রচিত মরুভাস্কর কাব্যগ্রন্থটি সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই হতে বাদ দেওয়ার দাবি সত্য। সপ্তম শ্রেণির ২০২৩ সালের বাংলা বইয়ে উক্ত কাব্যগ্রন্থটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। যা বিগত বছরে সপ্তম শ্রেণির সপ্তবর্ণা(বাংলা) বইয়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সপ্তম দাবি জানাই
দাবি
অষ্টম শ্রেণির বাংলা বই হতে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ নামক কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত কবিতাটি অষ্টম শ্রেণির বাংলা বই হতে বাদ দেওয়া হয়নি বরং এনসিটিবির ২০২৩ সালের পাঠ্যক্রমের অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা(বাংলা) বইয়ের ১০২ পৃষ্ঠায় ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতাটি রয়েছে।
অষ্টম দাবি যাচাই
দাবি
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই থেকে মধ্যযুগের বাংলা কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ নামক ধর্মভিত্তিক কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত কবিতাটি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই হতে বাদ দেওয়া হয়নি বরং এনসিটিবির ২০২৩ সালের পাঠ্যক্রমের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের ১৮৯ পৃষ্ঠায় ‘বন্দনা’ কবিতাটি রয়েছে।
নবম দাবি যাচাই
দাবি
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই হতে মধ্যযুগের মুসলিম কবি ‘আলাওল’ এর ধর্মভিত্তিক ‘হামদ’ নামক কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত কবিতাটি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই হতে বাদ দেওয়া হয়নি বরং এনসিটিবির ২০২৩ সালের পাঠ্যক্রমের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের ১৯২ পৃষ্ঠায় কবি আলাওল এর ‘হামদ’ কবিতাটি উল্লেখ রয়েছে।
দশম দাবি যাচাই
দাবি
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই হতে মধ্যযুগের মুসলিম কবি আব্দুল হাকিমের লেখা ‘বঙ্গবাণী’কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত কবিতাটি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই হতে বাদ দেওয়া হয়নি বরং এনসিটিবির ২০২৩ সালের পাঠ্যক্রমের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের ১৯৫ পৃষ্ঠায় কবি আবদুল হাকিম এর ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি রয়েছে।
একাদশ দাবি যাচাই
দাবি
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই হতে গোলাম মোস্তাফার লেখা ‘জীবন বিনিময়’ কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত কবিতাটি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই হতে বাদ দেওয়া হয়নি বরং এনসিটিবির ২০২৩ সালের পাঠ্যক্রমের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের ২২৩ পৃষ্ঠায় কবি গোলাম মোস্তফা এর ‘জীবন বিনিময়’ কবিতাটি রয়েছে।
দ্বাদশ দাবি যাচাই
দাবি
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই হতে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘উমর ফারুক’ নামক কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত কবিতাটি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই হতে বাদ দেওয়া হয়নি বরং এনসিটিবির ২০২৩ সালের পাঠ্যক্রমের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের ২৩৩ পৃষ্ঠায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ‘উমর ফারুক’ কবিতাটি রয়েছে।
ত্রয়োদশ দাবি যাচাই
দাবি
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামক কবিতাটি যুক্ত করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে জানা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির বর্তমান পাঠ্যক্রমে ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামের কোন কবিতা নেই। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর ২০২৩ ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামের কোনো কবিতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
চতুর্দশ দাবি যাচাই
দাবি
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বইয়ে ভারতের হিন্দুদের তীর্থস্থান রাচি’র ভ্রমণ কাহিনী অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে জানা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির বর্তমান পাঠ্যক্রমে রাঁচি ভ্রমণ’ নামের ভ্রমণ কাহিনী নেই। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এর ২০২৩ ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘রাঁচি ভ্রমণ’ নামের কোনো ভ্রমণ কাহিনী খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পঞ্চদশ দাবি যাচাই
দাবি
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘আমার সন্তান’ নামক একটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত কবিতাটি নবম-দশম শ্রেণির বর্তমান বাংলা সাহিত্য বইয়ে নেই। এনসিটিবির ২০২৩ সালের পাঠ্যক্রমের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে ‘আমার সন্তান’ নামক কোনো কবিতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ষোড়শ দাবি যাচাই
দাবি
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ভারতের পর্যটন স্পট ‘পালামৌ’ এর ভ্রমণ কাহিনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ভ্রমণ কাহিনীটি নবম-দশম শ্রেণির বর্তমান বাংলা সাহিত্য বইয়ে নেই। এনসিটিবির ২০২৩ সালের পাঠ্যক্রমের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে ‘পালামৌ’ নামক কোনো ভ্রমণ কাহিনী খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সপ্তদশ দাবি যাচাই
দাবি
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ নামের কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত কবিতাটি নবম-দশম শ্রেণির বর্তমান বাংলা সাহিত্য বইয়ে নেই। এনসিটিবির ২০২৩ সালের পাঠ্যক্রমের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ নামক কোনো কবিতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অষ্টাদশ দাবি যাচাই
দাবি
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘সাঁকোটা দুলছে’ নামের কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত কবিতাটি নবম-দশম শ্রেণির বর্তমান বাংলা সাহিত্য বইয়ে নেই। এনসিটিবির ২০২৩ সালের পাঠ্যক্রমের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে ‘সাঁকোটা দুলছে’ নামক কোনো কবিতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উনবিংশ দাবি যাচাই
দাবি
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘সুখের লাগিয়া’ নামের কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত কবিতাটি নবম-দশম শ্রেণির বর্তমান বাংলা সাহিত্য বইয়ে নেই। এনসিটিবির ২০২৩ সালের পাঠ্যক্রমের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে ‘সুখের লাগিয়া’ নামক কোনো কবিতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিংশ দাবি যাচাই
দাবি
প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দেওয়া হয়েছে ‘নিজেকে জানো’ নামক যৌন শিক্ষার বই।
ফ্যাক্ট
নিজেকে জানো বইটি এনসিটিবির কোনো পাঠ্যবই নয়। এবং ২০২৩ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কিশোর-কিশোরীর প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক ‘নিজেকে জানো’ নামক বই দেওয়া হয়নি।
ইতিমধ্যে ‘নিজেকে জানো’ বইকে মাধ্যমিকের পাঠ্য বই দাবি করা তথ্যকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
অপরদিকে অনুসন্ধানে ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি দৈনিক সমকালে “পাঠ্যপুস্তকে বাদ যাওয়া লেখা পড়বে শিশুরা” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হিন্দুয়ানি লেখা অভিযোগ তুলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল একটি যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত ১২টি কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধকে বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায়। হেফাজতের বাদ দেয়ার সুপারিশকৃত ১২ টি গল্প, প্রবন্ধ-কবিতাগুলো হলো-
হুমায়ুন আজাদের কবিতা ‘বই’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘বাংলাদেশের হৃদয়’, সত্যেন সেনের ছোটগল্প ‘লাল গরুটা’, এস ওয়াজেদ আলীর ভ্রমণ কাহিনী ‘রাঁচি ভ্রমণ’, শরৎচন্দ্র চট্টোপ্যাধায়ের ‘লালু’, ‘রামায়ণ’ সংক্ষিপ্ত রূপ, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের কবিতা ‘আমার সন্তান’, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভ্রমণ কাহিনী ‘পালামৌ’, লালন শাহের গান ‘সময় গেলে সাধন হবে না’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা ‘সাঁকোটা দুলছে’, জ্ঞানদাসের কবিতা ‘সুখের লাগিয়া’। এই ১২টি লেখা ২০১৩ সালে পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা হয়েছিল।
হেফাজতের সুপারিশে পরবর্তীতে ২০১৭ সালের পাঠ্যক্রম থেকে পুরনো ২২টি কবিতা এবং গল্প-প্রবন্ধ বাদ দেওয়া হয়। সেসময়-ই সম্প্রতি ফেসবুকে নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ে হিন্দুত্ববাদী কবিতা যুক্ত করা হয়েছে দাবিতে যে কবিতা-গল্প-প্রবন্ধগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো বাদ দেয়া হয়।
এছাড়াও ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হেফাজতের সুপারিশে ২০১৭ সালের পাঠ্যক্রমে দ্বিতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’য়ে ‘সবাই মিলে করি কাজ’, তৃতীয় শ্রেণিতে ‘খলিফা হযরত আবু বকর’, চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘খলিফা হযরত উমর (রা.) এবং ৫ম শ্রেণির বইয়ে শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’, ‘বিদায় হজ’ ও ‘শহিদ তিতুমীর’ যুক্ত করা হয়। উল্লেখ্য এ গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ,ভ্রমন কাহিনী, গুলো পূর্বে ছিলো এবং তা ২০১৩ সালের বাদ দেয়া হয়েছিল যা হেফাজতের সুপারিশে ২০১৭ সালে পাঠ্যসূচিতে পুনরায় যুক্ত করা হয়।
মূলত, ফেসবুকে নতুন বছরের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত পরিবর্তন দাবিতে যে তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ২০১৪ এর পর এবং ২০১৭ এর পূর্বের সময়ের আলোচ্য বিষয় ছিলো। সেসময় পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রতিক ফেসবুকে প্রচারিতগুলো বিষয় বাদ দেয়া এবং যুক্ত করার বিষয়টি ঘটেছিল। ২০১৭ সালে হেফাজতে ইসলামের সুপারিশে বর্তমানে ফেসবুকে উল্লিখিত বাদ দেওয়া বিষয়গুলো ফিরিয়ে আনা হয় এবং ফেসবুকে উল্লিখিত ২০১৪ সালে যুক্ত করা বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হয়। তবে, ২০২৩ সালে সালের ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বই থেকে ‘সততার পুরুষ্কার’ নামক গল্প, ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ নামক ভ্রমণ কাহিনী এবং সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই মরুভাস্কর নামক কাব্যগ্রন্থ বাদ দেওয়ার দাবি সত্য। এই তিনটি বিষয় ২০২২ সালের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
অর্থাৎ, ২০২৩ সালের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ইসলামকে বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদ অন্তর্ভুক্তির দাবিতে প্রচারিত ২৮ টি তথ্যের ৩ টি তথ্য সত্য, বাকি ২৫ টিই মিথ্যা।