মঙ্গলবার, অক্টোবর 8, 2024

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গ্রেফতার হননি

সম্প্রতি ‘আবারও মির্জা ফখরুল গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হননি বরং কসবায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক স্বপনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অধিক ভিউ পাবার আশায় থাম্বনেইলে মির্জা ফখরুল ইসলামের ছবি ব্যবহার করে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

গত ০৫ মে News Plus নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘আবারও মির্জা ফখরুল গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে মির্জা ফখরুল ইসলামের ছবি  ব্যবহার করে ১০ মিনিট ০৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।

Screenshot: Facebook 

অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এটি কয়েকটি প্রতিবেদন নিয়ে তৈরি একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও। তবে ভিডিওটি’র কোথাও মির্জা ফখরুল ইসলামের গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে ১০ মিনিট ০৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে ৪ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের সময় কসবায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক স্বপনকে গ্রেফতারের বিষয়ে বলা হয়। এবিষয়ে সংবাদ পাঠ ৪ মিনিট ৪২ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে ৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে।

উক্ত সংবাদ পাঠে বলা হয়, কসবায় বিএনপি নেতা অস্ত্রসহ গ্রেফতার, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিএনপির এক নেতাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় গ্রেফতারের ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কসবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এর আগে, দুপুরে তাকে উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দারোগাবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার শরীফুল হক স্বপন (৫১) উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে। তিনি কসবায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। জানা যায়, আগামী ৬ মে কসবা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনে নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনের জন্য উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দেলী-পাতাইসার উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। এ সময় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট ফখর উদ্দিন আহাম্মদ খানসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়ার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানায় নেতাকর্মীরা।’

উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম Dhaka Mail এ ‘কসবায় বিএনপি নেতা অস্ত্রসহ গ্রেফতার, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে’ শীর্ষক শিরোনামে গত ০৪ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: dhakamail.com

প্রতিবেদনে বলা হয়, কসবায় বিএনপি নেতা অস্ত্রসহ গ্রেফতার, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিএনপির এক নেতাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় গ্রেফতারের ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কসবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এর আগে, দুপুরে তাকে উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দারোগাবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার শরীফুল হক স্বপন (৫১) উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে। তিনি কসবায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। জানা যায়, আগামী ৬ মে কসবা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনে নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনের জন্য উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দেলী-পাতাইসার উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। এ সময় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট ফখর উদ্দিন আহাম্মদ খানসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়ার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানায় নেতাকর্মীরা।’

রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ঢাকা মেইলে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দাবিকৃত ভিডিওতে প্রতিবেদনের শেষ অংশ পর্যন্ত হুবহু পাঠ করা হয়েছে। এছাড়াও দাবিকৃত ভিডিও’তে এই সংবাদ পাঠের অংশে প্রদর্শিত ছবিটিও উক্ত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, উক্ত নিউজ বুলেটিন ভিডিও’র কোথাও মির্জা ফখরুল ইসলামের গ্রেফতার সম্পর্কিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

এছাড়াও মির্জা ফখরুলের গ্রেফতারের বিষয়ে  অধিকতর নিশ্চিতের জন্য প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম চ্যানেল২৪ এ গত ০৫ মে ‘নির্বাচিত নয় বলে সরকার জনগণের কথা শুনছে না: মির্জা ফখরুল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Youtube

প্রতিবেদন দেখা যায়, শুক্রবার (৫ মে) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ‘জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশ ও নদী’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেছেন। অপরদিকে মির্জা ফখরুল ইসলামের গ্রেফতার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিও একই দিনে পোস্ট করা হয়।

অর্থাৎ, উক্ত প্রতিবেদন থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম গ্রেফতার হননি।

পাশাপাশি, মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা বিএনপি সংশ্লিষ্ট কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গ্রেফতার সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘আবারও মির্জা ফখরুল গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনাম ও থাম্বনেইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছবি ব্যবহার করে একটি নিউজ বুলেটিন ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি’র ক্যাপশনে মির্জা ফখরুলের গ্রেফতারের কথা লেখা হলেও ভিডিওটির বিস্তারিত প্রতিবেদনে কোথাও এবিষয়ে বলা হয়নি। সেখানে কসবায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক স্বপনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের বিষয়ে বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গ্রেফতার হননি। 

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ০৯ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে এ ঘটনায় এক মাস পর অর্থাৎ চলতি বছরের ০৯ ই জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন তিনি।

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন ব্যক্তির গ্রেফতারের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হলে সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

আরও পড়ুন

- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img