সম্প্রতি, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়ের করা মামলার ১৬৮ নাম্বার ফাইলের ৩৪ নাম্বার ধারায় সুইজারল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস রায় ঘোষণা করেছেন। আদালতের রায়ে ১৬ টি মামলা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে।’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়াও পোস্টটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মুলক এবং বাংলাদেশ আইন কমিশন থেকে কোন তথ্য দিতে না পারায় ১৬ টি মামলা অবৈধ দেখিয়ে তাকে অব্যাহিত প্রদান করেছেন সুইজারল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস।’ পাশাপাশি মামলার পরবর্তী শুনানি ২৪ জুন ধার্য করা হয়েছে বলেও পোস্টে দাবি করা হয়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আইসিজেতে শেখ হাসিনার দায়ের করা কোনো মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও তাকে কথিত ১৬টি মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসব পোস্টে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আইসিজে সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত বলে উল্লেখ করা হলেও। প্রকৃতপক্ষে এটি নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত। এছাড়াও পোস্টগুলোর শুরুতে দাবি করা হয়, শেখ হাসিনার দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। যার পরবর্তীতেই বলা হচ্ছে ওই রায়ে শেখ হাসিনাকে ১৬ টি মামলায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখানে অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, তার দায়ের করা মামলাতেই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। প্রথমে একটি মামলার কথা বলা হলেও অব্যাহতির ক্ষেত্রে ১৬ টি মামলার কথা বলা হচ্ছে।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ১৯ মে থেকে উক্ত দাবির পোস্টগুলো ফেসবুকে প্রচারিত হতে দেখা যায়। এমন কিছু পোস্ট দেখুন (১, ২)।
পোস্টগুলোতে উল্লেখ করা হয়, পরদিন আদালতের পক্ষ থেকে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সকে সরবরাহ করা হবে। কিন্তু কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে রয়টার্সের ওয়েবসাইটে পরদিন অর্থাৎ ২০ মে থেকে এই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভিন্ন আরেকটি আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপাধ ও গণহত্যার বিষয়ে তদন্তের আবেদন জানানোর তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এটি কোনো মামলা নয়। এছাড়াও একই আদালতে লন্ডনে অবস্থানরত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আবেদন পিটিশন দাখিল করারও তথ্য পাওয়া যায়।
তবে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আইসিজেতে শেখ হাসিনার কিংবা তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে সুইজারল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে শেখ হাসিনার দায়ের করা মামলা বা তাকে অব্যাহতি দেওয়া ১৬ মামলার রায়ের বিষয়ে জানতে International Court of Justice -এর ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। পর্যালোচনায়, পেন্ডিং কেস এবং চলমান কেসের তালিকায় এমন কোনো মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও আগামী ২৪ জুন শেখ হাসিনার দায়ের করা কোনো মামলার শুনানি হওয়ার বিষয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সুইজারল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে দায়ের করা ১৬ টি মামলায় শেখ হাসিনাকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Dhaka Post Website: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তদন্তের আবেদন
- Ajker Patrika Website: ড. ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আইসিসিতে দেওয়া পিটিশনে যেসব অভিযোগ
- International Court of Justice Website