যমুনা টিভির ফটোকার্ড নকল করে ঢাবি উপাচার্যের নামে ভুয়া বক্তব্য প্রচার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৭  গতরাতে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের পরবর্তীতে মধ্যরাতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকা। এরই প্রেক্ষিতে “ছাত্রদের কাছে দুঃখ প্রকাশের কিছু নেই তার ‘বেয়াদব’ – ঢাবি উপাচার্য” শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “ছাত্রদের কাছে দুঃখ প্রকাশের কিছু নেই তার ‘বেয়াদব’ – ঢাবি উপাচার্য” শীর্ষক দাবিতে যমুনা টিভি কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, যমুনা টিভি কর্তৃক প্রকাশিত ভিন্ন শিরোনামের একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানও ছাত্রদের বেয়াদব বলে এমন কোনো মন্তব্য করেননি।  

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির লোগো ও প্রকাশের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ খুঁজে পাওয়া যায়। 

পরবর্তীতে আলোচিত ফটোকার্ডটির বিষয়ে অনুসন্ধানে যমুনা টিভির লোগো ও প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে ‘ছাত্রদের কাছে দুঃখ প্রকাশের কিছু নেই তার ‘বেয়াদব’ – ঢাবি উপাচার্য’ শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, যমুনা এর ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে আজ ২৭ জানুয়ারি গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাবি উপাচার্য’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। 

Photocard Comparison by Rumor Scanner

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইনের মিল রয়েছে। তবে, আলোচিত ফটোকার্ডের শিরোনাম ও শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে যমুনা টিভির ফটোকার্ডের ফন্টের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। উভয় ফটোকার্ডের উপাচার্যের ছবির মিল থাকলেও শিরোনামে পরিবর্তন দেখা যায়।

অর্থাৎ, যমুনা টিভির এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

পরবর্তীতে, এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে আজ (২৭ জানুয়ারি) “শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাবি উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ 

উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, রোববার (২৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে এক বিবৃতিতে উপাচার্য বলেন, বর্তমানে দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ অবস্থায় কোনো তৃতীয় পক্ষ যাতে সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মর্মাহত উল্লেখ করে উপাচার্য বিবৃতিতে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। ধৈর্য ধারণ এবং সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান উপাচার্য। বিবৃতিতে তিনি জানান, ২৭ জানুয়ারি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। যেসব বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন উপাচার্য।

সুতরাং, ‘ছাত্রদের কাছে দুঃখ প্রকাশের কিছু নেই তার ‘বেয়াদব’ – ঢাবি উপাচার্য’ শীর্ষক শিরোনামে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img