গতকাল (০৬ জুন) গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান শাখার ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারী নামে এক শিক্ষার্থী।
ফলাফল প্রকাশের পর উক্ত শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্ট দাবিতে Shahriar Alam নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে, তিনি জাতীয় মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন।

আলোচিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারীর ফেসবুক পোস্ট দাবিতে প্রচারিত পোস্টটি শাহরিয়ারের নয় বরং শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারীর নাম ও ছবি ব্যবহার করে এক নারী ভুয়া একটি অ্যাকাউন্ট খুলে উক্ত পোস্টটি করেছিলেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টদাতা Shahriar Alam এর ফেসবুক আইডিটি (আর্কাইভ) পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে পাবলিক প্রাইভেসিতে মাত্র দুইটি পোস্ট রয়েছে এবং পোস্ট দুইটিই গুচ্ছ পরীক্ষা কেন্দ্রিক। একটি হচ্ছে মেধা তালিকা বিষয়ক আলোচিত পোস্ট (আর্কাইভ) যা তিনি গতকাল দিয়েছিলেন। অন্যটি গুচ্ছ পরীক্ষার প্রশ্নের বিষয়ে পোস্ট (আর্কাইভ) যা তিনি দিন তিনেক আগে প্রকাশ করেন।

পরবর্তীতে আইডিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আইডিটির ইউজার নেম raina.mehr.5 লেখা যা একজন নারীর নাম বলে প্রতীয়মান হয়।

রিউমর স্ক্যানার টিম এরপর উক্ত প্রোফাইলের ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকে।
একই সময়ে আরও অনুসন্ধান করে, Shahriar Alam Patwary নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একইদিন (৬ জুন) প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে তিনি দাবি করেন, Shahriar Alam নামক অ্যাকাউন্টটি ফেক। তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে উক্ত অ্যাকাউন্টটি পরিচালিত হচ্ছে বলে পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি।

একই পোস্টে শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারী উল্লেখ করেন, ফেক আইডিটি তার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টের ছবি প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করেছে।

শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের লিংক দেওয়া ছিল। তার সূত্র ধরে উক্ত অ্যাকাউন্টের প্রোফাইলে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারীর সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের কাছে গুচ্ছ পরীক্ষায় তার এডমিট কার্ডের ছবি তুলে পাঠান। এডমিট কার্ডের ছবির মূল ফাইল জনাব শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারী রিউমর স্ক্যানারের কাছে পাঠানোর পর আমরা ছবিটি মেটাডাটা বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছি যে, শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারীর পাঠানো ছবিটি তার নিজেরই তোলা।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, এডমিট কার্ডটি তার কাছেই রয়েছে।
একইসাথে গুচ্ছ পরীক্ষায় তার ফলাফলের রিয়েল টাইম স্ক্রিনশটও পাঠিয়েছেন শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারী।

রিউমর স্ক্যানারের এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলাকালীন আজ (০৭ জুন) বিকেলে উক্ত উক্ত অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভ করে দেওয়া হয়। শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারী সে সময় আমাদের কাছে একটি স্ক্রিনশট পাঠান, যেখানে ফেক আইডিটি থেকে তাকে পাঠানো কিছু মেসেজ দেখা যাচ্ছে। মেসেজগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত আইডিটি এক নারী ব্যবহার করছিলেন।

একই স্ক্রিনশট তিনি তার এ বিষয়ে করা পোস্টেও কমেন্ট করেন।
মূলত, সম্প্রতি গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা প্রথম হয়েছেন শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারী নামে এক শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে উক্ত শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্ট দাবিতে Shahriar Alam নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টে দাবি করা হয়, তিনি প্রথম হয়েছেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত অ্যাকাউন্টটি ফেক। শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারীর নাম ও ছবি ব্যবহার করে এক নারী উক্ত অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করছিলেন। আজ বিকেলে অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভ করা হয়েছে।
সুতরাং, ভুয়া একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টকে গুচ্ছের এ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারীর পোস্ট দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Shahriar Alam Patwary: Facebook Post
- Statement from Shahriar Alam Patwary
- Image File’s Metadata analysis
- Rumor Scanner’s own analysis