গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন অবধি অন্তত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। আহত ও দগ্ধ হয়েছে অন্তত শতাধিক, যাদের বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী। তবে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থীরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি ‘মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি, যা সরকার লুকানোর চেষ্টা করছে।’ নিহতদের সঠিক নাম-তথ্য প্রকাশ, নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ ৬ দফা দাবিতে গত ২২ জুলাই বিক্ষোভ করে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে, ‘মাইলস্টোন কলেজের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলি, নিহত ৩ – গুলিবিদ্ধ আরও ১৫জন’ শীর্ষক দাবিতে মূলধারার গণমাধ্যম ঢাকা ট্রিবিউনের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাইলস্টোন কলেজের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ৩ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছে শীর্ষক দাবিতে ঢাকা ট্রিবিউন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ঢাকা ট্রিবিউনের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিন্ন একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে৷
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এতে ঢাকা ট্রিবিউনের লোগো রয়েছে এবং আলোচিত ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২২ জুলাই ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা ট্রিবিউনের লোগো ও ফটোকার্ড প্রকাশের তারিখের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবিসম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও,ঢাকা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ২২ জুলাই গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে “মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে অন্তত তিন জন শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে গেছে।” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির সাথে এই ফটোকার্ডটির ডিজাইন ও ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবির হুবহু মিল রয়েছে। ঢাকা ট্রিবিউনের মূল ফটোকার্ডটিতে ‘মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে অন্তত তিন জন শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে গেছে।’ শীর্ষক বাক্য থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে ‘মাইলস্টোন কলেজের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলি, নিহত ৩ – গুলিবিদ্ধ আরও ১৫জন’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।

অর্থাৎ, ঢাকা ট্রিবিউনের এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
মূল ফটোকার্ড সম্বলিত ঢাকা ট্রিবিউনের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২২ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল ছোঁড়াছুড়ির ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী আহত হয়।
পাশাপাশি, আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো তথ্য অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “মাইলস্টোন কলেজের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলি, নিহত ৩ – গুলিবিদ্ধ আরও ১৫জন” শীর্ষক দাবিতে ঢাকা ট্রিবিউনের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- Dhaka Tribune – Facebook post