পুলিশকে পিটিয়ে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের গণভবন দখলে নেওয়ার ভুয়া দাবি ইউটিউবে 

সম্প্রতি, “বাঁশ হাতে ভোরেই পুলিশকে পিটিয়ে গণভবন দখলে নিলো জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা” শীর্ষক থাম্বনেইল ও “সকালেই চতুর্দিক থেকে গণভবন ঘেরাও করলো জামায়াত শিবিরের লাখো নেতা-কর্মীরা” শীর্ষক শিরোনামে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

পুলিশকে পিটিয়ে

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশকে পিটিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা গণভবন দখল বা ঘেরাও করেনি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ঘটনারও পুরোনো ছবি ও ভিডিওর সাথে চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার জাতীয় দৈনিক’Daily Ittefaq’ এর ইত্তেফাকের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর “রাজধানীতে জামায়াত ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। ভিডিওটির কোথাও গণভবন দখল কিংবা পুলিশকে পেটানোর দৃশ্য দেখা যায়নি।

Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিওটির বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানে দৈনিক ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর “আজও রাজধানীতে জামায়াতের বিক্ষোভ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot : Daily Inqilab 

উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটির দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন রাজধানীতে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর উত্তর বাড্ডা ওভার ব্রিজের নিচ থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেরুল বাড্ডা এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

অর্থাৎ এই ঘটনার ভিডিওটি কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে থাম্বনেইলে যুক্ত পুলিশের আহত হওয়ার ছবির বিষয়ে অনুসন্ধানে দ্য ডেইলি স্টারের বাংলা সংস্করণে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর “বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে ৪১ পুলিশ আহত: ডিএমপি মিডিয়া সেল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেসময় রাজধানীর পল্টন-কাকরাইল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৪১ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে থাকা পুলিশের আহত হওয়ার ছবিটিকে আলোচিত ভিডিওটির থাম্বনেইলে যুক্ত করা হয়েছে। 

তাছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে পুলিশকে পিটিয়ে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের গণভবন দখলে নেওয়ার কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর রাজধানীতে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর। একই বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন-কাকরাইল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৪১ পুলিশ সদস্য আহত হয়। সম্প্রতি গত ১ অক্টোবরের জামায়াতে ইসলামীর মিছিলের ভিডিওর সাথে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আহত এক পুলিশ সদস্য ছবি জুড়ে দিয়ে “বাঁশ হাতে ভোরেই পুলিশকে পিটিয়ে গণভবন দখলে নিলো জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সম্প্রতি জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীদের কর্তৃক পুলিশ পিটিয়ে গণভবন দখলের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সুতরাং, পুলিশকে পিটিয়ে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের গণভবন দখলে নেওয়ার দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img