সম্প্রতি, “এই মিশরীয় ভাই টি অন্ধ, গতকাল হেরেম শরীফে তারাবি পড়া অবস্থায় হঠাৎ করেই আল্লাহ পাক তার চোখের আলো ফিরিয়ে দেন।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
টিকটকে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অন্ধত্ব থেকে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ভিডিওটি ২০১৬ সালের এবং উক্ত ভিডিওতে যে লোকটি অন্ধত্ব থেকে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে সেই লোকটি পুরোপুরি অন্ধ ছিলেন না।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে, India.com নামের একটি অনলাইন পোর্টালে ২০১৬ সালের ০৯ জুন “Mecca Miracle! This video of a blind man who regained his sight at Masjid al-Haram after ‘namaz’ is going viral” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “মক্কায় নামাজ পড়ার পর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া এক অন্ধ ব্যক্তির একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছে, এক মিশরীয় মুসলিম ব্যক্তি। মক্কার মসজিদে নামাজ আদায় করে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন।
ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে দৃশ্যত অন্ধত্ব থেকে সেরে ওঠার পরে উদযাপন করতে দেখা যায়। এ সময় আরবি ভাষায় লোকটিকে “আমি আবার আমার দৃষ্টি ফিরে পেয়েছি, খোদা। ধন্যবাদ আল্লাহ্. অভিনন্দন। আল্লাহু আকবার” বলতে শোনা যায়।
কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়। গল্পটি উন্মোচিত হওয়ার সাথে সাথে আরও বিশদ প্রকাশ পেয়েছে, স্পর্শকাতর গল্পটি একটি লজ্জাজনক বর্ণনা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, লোকটি আসলে অন্ধ ছিল না, তবে একজন পেশাদার পকেটমার ছিল যিনি তীর্থযাত্রীদের মোবাইল ফোন বা মানিব্যাগ চুরি করার সুযোগ তৈরি করতে চাচ্ছিল।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর একজন ব্যক্তি নিজেকে ভাইরাল ভিডিওতে থাকা সেই ব্যক্তির ছেলে বলে দাবি করে এই ঘটনা নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন, যা হাফিংটন পোস্ট এবং অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়। ‘তামের সাইয়িদ’ নামের উক্ত ব্যক্তি সেই পোস্টে জানান, তার বাবা একটি চোখে রক্ত জমাট বাঁধাজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তার স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা ছিল, যা মক্কায় নিরাময় হয়েছিল, সম্পূর্ণ অন্ধত্ব নয়। তবে তামিম সাইয়িদ আসলে অভিযুক্ত ব্যক্তির ছেলে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”
Thaqfny নামের একটি আরবি ভাষার ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ৬ জুন প্রকাশিত “The truth about the Egyptian pilgrim who regained his sight” শিরোনামে আরবি ভাষার একটি প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়। (শিরোনামটি গুগল ট্রান্সলেটর এর সাহায্যে আরবি থেকে ইংলিশে রুপান্তর করা হয়েছে)
তবে alroya নামের একটি আরবি ভাষার ওয়েবসাইটে উল্লেখ করে বলা হয়, ভাইরাল ব্যক্তির সন্তান দাবি করা সেই ব্যক্তি “তার বাবা সম্পূর্ণ অন্ধ ছিলেন এবং তীর্থযাত্রীদের সাথে প্রতারণা করার সুযোগ তৈরি করতে চেয়েছিলেন বলে প্রচারিত দুটি বিষয়কে গুজব বলে নিন্দা করেছেন।”
অর্থাৎ, Alorya এর প্রতিবেদন অনুযায়ী নিজেকে ভাইরাল ভিডিওর লোকটির সন্তান দাবি করা ব্যক্তি বলেছেন যে, তার বাবা সম্পূর্ণ অন্ধ ছিলেন না এবং তার বাবা প্রতারক/পকেটমার ছিলেন না।
Yalalla.com নামের অন্য আরেকটি আরবি ভাষার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে সেই লোকের সন্তান দাবি করে পোস্ট দেওয়া ব্যক্তির বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়-
“তিনি সেই গুজবগুলির নিন্দা করেছিলেন যেগুলি বলে যে তার বাবা সম্পূর্ণ অন্ধ ছিলেন বা তাকে অভিযুক্ত করেছেন যে তিনি অভয়ারণ্যের উপাসকদের সাথে প্রতারণা করছেন। তিনি আরে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি দায়িত্বশীল পুলিশের সাথে দেখা করে ঘটনার বিশদ বিবরণ নিয়ে তাদের পরিচালকের সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন”
আরো একাধিক আরবি ভাষার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভাইরাল মিশরীয় লোকটি সম্পূর্ণ অন্ধ ছিলো না। বরং তার একটি চোখে সমস্যা ছিলো, যা মক্কায় সেরে যায় বলে সেই লোকের ছেলে দাবি করা ব্যক্তি নিশ্চিত করে।
এছাড়াও অন্ধ হিসেবে ভাইরাল সেই লোকটির হাতে ঘড়ি থাকায় সেসময় অনেকে তার পুরোপুরি অন্ধ না হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল।
উক্ত ঘটনার পর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া সেই ব্যক্তিকে প্রতারণা করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিলে বলে একটি দাবি সেসময় সমাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিলো। তবে গ্র্যান্ড মসজিদের নিরাপত্তার জন্য স্পেশাল ফোর্সের সরকারী মুখপাত্র মেজর সামেহ আল-সালমি, আরব জাতীয়তার এক তীর্থযাত্রীকে উক্ত কারণে গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে সঠিক নয় বলে নিশ্চিত করেছেন।
Also Read: ছবিটি মহানবী (সা:) বাড়ির নয়, এটি ইরানের মরুভূমিতে অবস্থিত একটি গ্রামের ছবি
মূলত, ওমরাহ করতে আসা এক মিশরীয় নাগরিক মক্কায় ইবাদতকালে তার চোখের সমস্যা সেরে ওঠার বিষয়টি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার ঘটনাটি কেউ ভিডিও ধারণ করে অন্ধ ব্যক্তির মক্কায় ইবাদতকালে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার দাবিতে প্রচারের পর তা বিভ্রান্তিকর ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং, ২০১৬ সালের পুরোনো একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে মক্কায় তারাবীর নামাজের পর অন্ধত্ব থেকে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে যা সঠিক নয় এবং ভিডিওতে থাকা মিশরীয় লোকটি পুরোপুরি অন্ধ ছিলেন না।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
- Claim Review: এই মিশরীয় ভাই টি অন্ধ, গতকাল হেরেম শরীফে তারাবি পড়া অবস্থায় হঠাৎ করেই আল্লাহ পাক তার চোখের আলো ফিরিয়ে দেন
- Claimed By: Facebook Posts
- Fact Check: Partly False
[/su_box]
তথ্যসূত্র
- India.com Mecca Miracle! This video of a blind man who regained his sight at Masjid al-Haram after ‘namaz’ is going viral | India.com
- Thaqfny: https://www.thaqfny.com/57724/%D8%AD%D9%82%D9%8A%D9%82%D8%A9-%D8%A7%D9%84%D9%85%D8%B9%D8%AA%D9%85%D8%B1-%D8%A7%D9%84%D9%85%D8%B5%D8%B1%D9%8A-%D8%A7%D9%84%D8%B0%D9%8A-%D8%B9%D8%A7%D8%AF-%D9%84%D9%87-%D8%A8%D8%B5%D8%B1%D9%87/
- Alroya: بالفيديو.. حقيقة القبض على معتمر كفيف عاد له بصره في الحرم | جريدة الرؤية العمانية
- Yalalla: ابن المعتمر الذي عاد اليه بصره يحكي التفاصيل الحقيقة للحادثة موقع يالالة – yalalla.com – عالم المرأة بعيون مغربية
- Almalnews: https://almalnews.com/%D8%A8%D8%A7%D9%84%D9%81%D9%8A%D8%AF%D9%8A%D9%88-%D8%AD%D9%82%D9%8A%D9%82%D8%A9-%D8%B9%D9%88%D8%AF%D8%A9-%D8%A7%D9%84%D8%A8%D8%B5%D8%B1-%D9%84%D9%84%D9%83%D9%81%D9%8A%D9%81-%D8%A7%D9%84%D9%85%D8%B5
- Elbalad: شاهد.. حقيقة إلقاء القبض على معتمر مصري ادعى عودة بصره في المسجد الحرام