সম্প্রতি, “বাজ পাখি প্রায় ৭০ বছর বাঁচে” শীর্ষক শিরোনামে বাজপাখির জীবন বৃত্তান্ত সম্পর্কিত একটি দীর্ঘ তথ্য সম্বলিত পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
যা দাবি করা হচ্ছে
“বাজ পাখি প্রায় ৭০ বছর বাঁচে। কিন্তু মাত্র ৪০ বছর পার করার পরেই বাজ পাখিকে বাঁচার জন্য কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ওই সময় তার শরীরের তিনটি প্রধান অঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে।
১. থাবা (পায়ের নখ) লম্বা ও নরম হয়ে যায়
শিকার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
২. ঠোঁটটা সামনের দিকে মুড়ে যায়। ফলে খাবার খুটে বা ছিড়ে খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
৩. ডানা ভারী হয়ে যায় এবং বুকের কাছে আটকে যাওয়ার দরুন উড়াড় ক্ষমতাও সীমিত হয়ে যায়। ফলস্বরুপ শিকার খোজা, ধরা ও খাওয়া তিনটেই ধীরে ধীরে মুশকিল হয়ে পড়ে। তখন ওর কাছে তিনটে পথ খোলা থাকেঃ
১. আত্নহত্যা
২. শকুনের মত মৃতদেহ খাওয়া
৩. নিজকে পুনরস্থাপিত করা
বাজ তখন করে কি, ও একটা উচু পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে বাসা বাঁধে আর শুরু করে নতুন প্রচেষ্টা।
সে প্রথমে তার ঠোঁট টা পাথরে মেরে মেরে ভেঙে ফেলে। এর থেকে কঠিন যন্ত্রণা আর হয় না। একইরকমভাবে নখ গুলো ভেঙে ফেলে আর অপেক্ষা করে নতুন নখ ও ঠোঁট গজানোর। নখ ও ঠোঁট গজালে ও ওর ডানার সমস্তপালক গুলো ছিড়ে ফেলে। কষ্ট সহ্যকরে অপেক্ষা করতে থাকে নতুন পালকের জন্য। ১৫০ দিনের যন্ত্রণা ও প্রতীক্ষার পর সে সব নতুন করে পায়। পায় আবার সেই লম্বা উড়ান আর ক্ষিপ্রতা। এরপর সে আরো ৩০ বছর জীবিত থাকে আগের মত শক্তি ও সামর্থ নিয়ে।”
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত ফেসবুকে সর্বাধিক ভাইরাল হওয়া এ সংক্রান্ত পোস্টটিতে প্রায় ৩ হাজার ১০০ এর উপরে মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এছাড়া পোস্টটি ১০৮ বার শেয়ার করার পাশাপাশি ৪৮৪ টি মন্তব্য করা হয়েছে। এসব মন্তব্যের বেশিরভাগই আলোচিত দাবিকে সত্য ধরে নিয়ে করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, বাজপাখি ৭০ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকেনা। এছাড়াও, বাজপাখি ৪০ বছর পর তার ঠোঁট, নখ ও পালক নিজে নিজে নষ্ট করে শীর্ষক তথ্যটিও সত্য নয় বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ব্যতীত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
তাছাড়া প্রাণীদের লাইফস্টাইল সম্পর্কিত বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে, ‘জীবনচক্রের কোন এক পর্যায়ে নখ ঠোঁট এবং ডানা অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কারণে বাজপাখির স্বেচ্ছায় এসব অঙ্গহানি ঘটানো এবং পরবর্তীতে আবার নতুন করে নখ, ঠোঁট এবং ডানার পালক গজানো সম্পর্কিত’ কোনো তথ্য খুজে পাওয়া যায়না।
প্রকৃতপক্ষে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাজপাখির জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে প্রচারিত মোটিভেশনাল পোস্টটি সম্পূর্ণ বানোয়াট।
মূলত, কোনোরূপ প্রমাণ ছাড়াই বিভিন্ন সময় ধরে বাজপাখি কিংবা ঈগল পাখির “৭০ বছর বয়স পর্যন্ত বেছে থাকা এবং ৪০ বছর পর নিজের নখ ও ঠোঁট ভেঙে ফেলা এবং পালক ছিঁড়ে ফেলার” কাহিনীটি প্রচারিত হয়ে আসছে। প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের গল্প সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও উক্ত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা মিথ্যা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।