সম্প্রতি ‘ইসি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয় এমন কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়া তার এমন কোনো বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও পাল্টা কোনো বক্তব্য দেননি বরং দুইটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে একসাথে করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা কি বলেছেন?
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার অনলাইন পোর্টাল Dhaka Post এ গত ২৮ ডিসেম্বর ‘গাইবান্ধায় সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করার চ্যালেঞ্জ ইসির‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিও প্রতিবেদনটির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয় শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিও প্রতিবেদনটিতে রাশেদা সুলতানা বলেন,
‘বন্ধ হওয়া গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) উপ-নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠিত করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগামী ৪ তারিখের নির্বাচন যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সাধারণ মানুষ যেন কোনো প্রকার ভয়ভীতি ছাড়াই ভোট দিতে পারে সেজন্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চ্যালেঞ্জ নেওয়া হয়েছে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে যেকোনো উপায়ে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
– নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন প্রস্তুতি নিয়েছি কোনো ভোটার যেন বলতে না পারে আমি ভোট দিতে পারিনি। এ অঞ্চলের মানুষ নির্দিদ্ধায় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে। পাশাপাশি এই নির্বাচনে কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এছাড়া ভিডিওটির ২ মিনিট ৩২ সেকেন্ড সময়ে রাশেদা সুলতানা নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে দৃঢ পদক্ষেপের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা নির্বাচন করবো না, করবো না, করবো না। আমাদের যতক্ষণ আইনের এখতিয়ার আছে, আমরা সেটা প্রয়োগ করবো, প্রয়োগ করবো, প্রয়োগ করবো।’
তবে তিনি তার বক্তব্যে কোথাও ‘এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না’ পুরো ভিডিওতে এমন কোনো বক্তব্য দেননি। এছাড়া মূলধারার কোনো গণমাধ্যম সূত্রেও তার এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কি বলেছেন?
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার এসব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ইউটিউবের ভিডিওটির ৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ড সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়। কিন্তু বিশ্লেষণে দেখা যায়, তার উক্ত বক্তব্যের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার প্রেক্ষাপটে কোনো মিল নেই এবং ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সময়কালও ভিন্ন।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সূত্রে দেখা যায়, তার এই বক্তব্যটি মূলত বাংলাদেশের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ঘিরে। এই বিষয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এর ‘রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ‘ইয়েস উদ্দীনকে’ মনোনয়ন দেওয়া হয়নি: ওবায়দুল কাদের‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “আমরা এমন কোনো রাষ্ট্রপতি করিনি যার নাম ইয়াজউদ্দিন, কার্যক্রমে ইয়েস উদ্দিন। এ ইয়েস কোনো ব্যক্তিকে আমরা রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিইনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, কোনো অপশক্তিকে মনোনয়ন দিইনি।”

এছাড়া তিনি তার পুরো বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার বক্তব্য ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো মন্তব্যই করেননি। তার পুরো বক্তব্যটি শুনুন এখানে।

মূলত, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনে নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বক্তব্য রাখেন। তার এই বক্তব্যের ভিডিওয়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচন করার বিষয়ে দেওয়া আরেকটি বক্তব্যকে জুড়ে দিয়ে ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে যে, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয় বলে মন্তব্য করেছেন এবং এর প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এমন কোনো তথ্য উক্ত ভিডিও দুইটি থেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি কোনো মন্তব্য করেননি।
অর্থাৎ, কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে চটকদার ক্যাপশন ও থাম্বনেইলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও ইসির পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের দাবিটি ভিত্তিহীন।
তথ্যসূত্র
- Dhaka Post: গাইবান্ধায় সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করার চ্যালেঞ্জ ইসির
- Prothom Alo: রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ‘ইয়েস উদ্দীনকে’ মনোনয়ন দেওয়া হয়নি: ওবায়দুল কাদের
- Rumor Scanner Own Analysis