মেয়েদের সাতটি বিয়ের অনুমতি চেয়ে প্রচারিত প্ল্যাকার্ডটি সম্পাদিত

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্ল্যাকার্ড হাতে একজন মেয়ের ছবি প্রচার করা হয়েছে যেখানে প্ল্যাকার্ডটিতে লেখা রয়েছে, “ছেলেদের ৭ টা বিয়ে সুন্নত | আমাদের মেয়েদের ও ৭টা বিয়ে করার অনুমতি দিতে হবে”।

ফেসবুকে প্রচারিত এরূপ পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এরূপ পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এরূপ পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্ল্যাকার্ডের ছবিটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে আসল প্ল্যাকার্ডে “মেয়েদেরকে ব্যাডটাচ শিখানোর আগে ছেলেদের How Not To Touch শিখান” লেখা ছিল যা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘ছেলেদের ৭ টা বিয়ে সুন্নত | আমাদের মেয়েদের ও ৭টা বিয়ে করার অনুমতি দিতে হবে’ লিখে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, প্ল্যাকার্ড হাতে প্রদর্শিত মেয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে অনলাইনে একই ব্যক্তির হাতে একই স্থানে ধারণকৃত একটি ছবি পাওয়া যায়, যার সাথে লেখা ব্যতীত বাকী সবকিছুর মিল রয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত প্ল্যাকার্ডটিতে লেখা রয়েছে “মেয়েদেরকে ব্যাডটাচ শিখানোর আগে ছেলেদের How Not To Touch শিখান”। এছাড়াও, উক্ত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে বামপাশের নিচের কোণায় মোবাইলের নাম ‘Redmi Note 13 PRO 5G’ ও মোবাইলটি ব্যবহারকারীর নাম ‘Humaiya Sarkar’ দেখা যায়। এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ‘Humaiya Sarkar’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১০ মার্চে “আমার সোনার বাংলায় ধর্ষকদের ঠাই নাহ,,” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে সাতটি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যেখানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটিতে প্রদর্শিত মেয়ে ও তার হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডটিরও উপস্থিতি পাওয়া যায়। একইসাথে ছবিগুলো গত ১০ মার্চে তোলা হয়েছে বলেও ছবিটিতে দেখা যায়।

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম ‘সময় টিভি’র ওয়েবসাইটে গত ১০ মার্চ প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “ধর্ষকের মাথায় জমটুপি পরিয়ে হাতে-কোমড়ে দড়ি বেঁধে বগুড়ায় প্রতীকী প্রতিবাদ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় এই বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়।” এছাড়াও, উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবিতে থাকা একজন মেয়েকে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিতেও উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।

আলোচিত প্ল্যাকার্ডটির লেখার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হুমাইয়া সরকারের (যার মোবাইলে ছবিটি তোলা হয়েছে) সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। তিনি জানান, “ছেলেদের ৭ টা বিয়ে সুন্নত | আমাদের মেয়েদের ও ৭টা বিয়ে করার অনুমতি দিতে হবে” লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ডটি সম্পাদিত। আসল প্ল্যাকার্ডে “মেয়েদেরকে ব্যাডটাচ শিখানোর আগে ছেলেদের How Not To Touch শিখান” লেখা ছিল। এছাড়াও তিনি বলেন, প্রচারিত ছবিতে প্রদর্শিত মেয়ে হিন্দু এবং ‘Simi Roy’ নামের উক্ত মেয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্টও তিনি রিউমর স্ক্যানারকে সরবরাহ করেন।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘Bogura Woman’s Cricketer’s’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বরে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায় যেখানে উক্ত মেয়েকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং তার নাম সিমি রায় উল্লেখ করা হয়।

সুতরাং, “ছেলেদের ৭ টা বিয়ে সুন্নত | আমাদের মেয়েদের ও ৭টা বিয়ে করার অনুমতি দিতে হবে” শীর্ষক লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ডটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img