প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্দিরে বসে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নগ্ন মূর্তি সামনে রেখে প্রার্থনা করছেন – এমন একটি ছবি চলতি বছর বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। ছবিটির উপরের অংশে এই মন্দিরের অবস্থান গোপালগঞ্জ দাবি করে এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, ‘লেংটা কম্বল চোরের মন্দির’।
এই ছবিটি ব্যবহার করে চলতি বছরের কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্দিরে বসে বঙ্গবন্ধুর নগ্ন মূর্তির সামনে প্রার্থনা করার ছবিটি আসল নয় বরং প্রার্থনারত অবস্থায় তোলা সিলেটে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবির সাথে ঢাকার একটি মন্দিরের দৃশ্য জোড়া লাগিয়ে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত এই ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে শুরুতে এর সূত্রপাত বের করার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর ‘বাংলার জনগণ’ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই ছবিটি সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট হিসেবে নজরে আসে আমাদের।
‘সবাই বলুন জয় বাংলা’ ক্যাপশন দিয়ে এই পোস্টে আলোচিত ছবিটির সাথে শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জড়িয়েও একটি ছবি যুক্ত করা হয়েছে। এটিও সম্পাদিত একটি ছবি।
বাংলার জনগণ নামের অ্যাকাউন্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট চালুর পর থেকেই এই অ্যাকাউন্টে প্রায়ই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পাদিত ছবি পোস্ট করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাহিয়া মাহি ও ডা. মুরাদ হাসানের একটি সম্পাদিত ছবি নিয়ে ইতোমধ্যেই ফ্যাক্টচেক প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। একইভাবে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জানাজার একটি ছবিও এই অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়েছে, যা পূর্বেই রিউমর স্ক্যানার ফ্যাক্টচেক করে জানিয়েছে যে, এটি মূলত অখণ্ড পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জানাজার ছবি।
আলোচিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গোপালগঞ্জে ‘লেংটা কম্বল চোরের মন্দির’ নামে কোনো মন্দিরের অস্তিত্ব মেলেনি। পরে শেখ হাসিনার প্রার্থনার ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, এটি ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বরের ছবি। সেসময় শেখ হাসিনা সিলেটের তিন মাজার জিয়ারত করতে যান। ছবিটি তখনই তোলা হয়৷
একই ছবিতে মন্দিরের দৃশ্যটির বিষয়েও আলাদা অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এটি ঢাকার সূত্রাপুরের ২৬, আর এম দাস রোডে অবস্থিত গৌতম মন্দিরের দৃশ্য।
রতন পাল নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাতে এই মন্দিরের একটি রিলস ভিডিও আপলোড করা হয় ফেসবুকে। এই ভিডিওতে মন্দিরের দৃশ্যের সাথে আলোচিত ছবির মন্দিরের দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। আলোচিত ছবিটি এর পরদিন থেকেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
প্রধানমন্ত্রী সূত্রাপুরের এই মন্দিরে কখনো গিয়েছেন কিনা সে বিষয়ে কোনো তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া যায়নি।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্দিরে বসে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নগ্ন মূর্তি সামনে রেখে প্রার্থনা করছেন – এমন একটি ছবি গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। ছবিটির উপরের অংশে এই মন্দিরের অবস্থান গোপালগঞ্জ দাবি করে এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, ‘লেংটা কম্বল চোরের মন্দির’। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, এই নামে গোপালগঞ্জে কোনো মন্দির নেই। এটি মূলত ঢাকার সূত্রাপুরের একটি মন্দিরের ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের দৃশ্য, যেখানে প্রধানমন্ত্রী গিয়েছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থনারত অবস্থার ছবিটি ২০১৮ সালে সিলেটের। অর্থাৎ, ঢাকার একটি মন্দিরের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সিলেটের একটি পুরোনো ছবি জোড়া লাগিয়ে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্দিরে বসে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নগ্ন মূর্তি সামনে রেখে প্রার্থনা করছেন – এমন একটি ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা এডিটেড বা সম্পাদিত।