শুক্রবার, মে 23, 2025

ভারতে মুসলিম ব্যক্তিকে জয় শ্রীরাম বলতে জোর করা হচ্ছে দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির অডিওটি সম্পাদিত

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে আঘাত করা হচ্ছে। ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটিতে “মুসলিম ব্যক্তিকে জোর করে জয় শ্রীরাম বলানো হচ্ছে”। উল্লেখ্য যে, ভিডিওটির অডিওতে হিন্দি ভাষায় বারবার “জয় শ্রীরাম বল” বলতে শোনা যায়।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে মুসলিম ব্যক্তিকে জয় শ্রীরাম বলতে জোর করা হয়নি বরং, উক্ত ভিডিওটির মূল অডিও পরিবর্তন করে তাতে ভিন্ন একটি ভিডিওর অডিও সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত মুসলিম ব্যক্তিকে কিশোরী হেনস্থার দায়ে মারধর করা হয়েছে এবং মূল ভিডিওতে সে বিষয়ে কথা হচ্ছিল।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘The_Gaharwar’ নামক ইউজার নেমের একটি এক্স অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ৯ মে তারিখে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে হিন্দি ভাষায় লেখা হয়, “দিল্লির শাহদারা এলাকার নত্থু কলোনি চৌকে, মুসলিম সম্প্রদায়ের এক ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সের ব্যক্তি মাত্র ১৪ বছর বয়সী এক মেয়ের সঙ্গে গত ৫ দিন ধরে উত্ত্যক্ত করছিল। আজ তাকে নত্থু কলোনি চৌকে মেয়েটির মা-বাবা এবং পরিবারের লোকজন হাতে-নাতে ধরে ফেলে।” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত) 

Comparison : Rumor Scanner

প্রচারিত উক্ত ভিডিওটির অডিওতে ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষদের হিন্দি ভাষায় বলতে শোনা যায়, “…ছোট মেয়েকে হেনস্তা করেছে।..” কথার সাথে মানুষের অঙ্গভঙ্গির মিল পাওয়া যায়। তবে, অডিওতে জয় শ্রীরামের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ওয়েবসাইটে “Delhi: Man stalks, molests 13-yr-old, thrashed by her parents, locals” শীর্ষক শিরোনামে ২০২২ সালের ১২ মে’তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “টিউশন ক্লাসে যাওয়ার পথে এক ১৩ বছর বয়সী কিশোরীকে যৌন নিগ্রহ করার অভিযোগে দিল্লির একটি এলাকায় এক মধ্যবয়সী ব্যক্তিকে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা করা হয়। ওই ব্যক্তিকে পাথর ও লাঠি দিয়ে একদল পুরুষ প্রহার করে, পরে এলাকার টহল পুলিশ দ্বারা উদ্ধার করে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যায়। পুলিশ অভিযুক্ত ইরফান খানকে (৩৭) চিহ্নিত করেছে, তিনি একজন হিসাবরক্ষক, বিবাহিত এবং তিনটি সন্তানের বাবা। কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইরফান খানের বিরুদ্ধে স্টকিং এবং পোকসো আইনের (POCSO Act) বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ইরফান খানকে বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।” (অনূদিত)

এ বিষয়ে ২০২২ সালে আরেক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়। মারধর করার কারণ হিসেবে কিশোরীকে উত্যাক্ত করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও তাকে জয় শ্রীরাম বলতে জোর করার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে সংযুক্ত জয় শ্রীরাম বলতে জোর করার অডিওটির সূত্রপাতের বা আসল ঘটনার বিষয়ে জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম CNN-News18 নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “Forced To Say Jai Shree Ram, Viral Video Of An Ujjain Vendor Who Got Caught In Communal Drift” শীর্ষক শিরোনামে ২০২১ সালের ২৯ আগস্টে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির ৫ সেকেন্ড পরবর্তী সময়ের অডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির অডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ভিডিওটির বর্ণনা অংশে বলা হয়, ভারতের মধ্যপ্রদেশের উজ্জেন/উজ্জাইনের একজন পণ্য বিক্রেতাকে জোর করে জয় শ্রীরাম বলানো হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “উজ্জেন পুলিশ মধ্যপ্রদেশের উজ্জেন জেলার একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভাঙারি ব্যবসায়ীকে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে বাধ্য করার অভিযোগে দুই পুরুষকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি উজ্জেন থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে মাহিদপুর তহশিলের ঝারডা গ্রামে ঘটেছিল এবং এর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিওতে দুই পুরুষকে ভাঙারি ব্যবসায়ীকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বাধ্য করতে দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে, ওই ব্যক্তি আপত্তি জানালে উক্ত পুরুষরা তাকে প্রশ্ন করে, “তোমার এই স্লোগান নিয়ে সমস্যা কী?” ভিডিওতে দেখা যায় যে পুরুষ দুজন ভাঙারি জিনিসগুলো ফেলে দিচ্ছে এবং ব্যবসায়ীকে গ্রামে ফিরে না আসার হুমকি দিচ্ছে। অনেক চাপ সত্ত্বেও, তিনি শেষ পর্যন্ত ‘জয় শ্রী রাম’ বলে এবং তারপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।” (অনূদিত)

অর্থাৎ, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ভারতের ভিন্ন একটি জায়গার ২০২১ সালের ভিন্ন একটি ভিডিওর অডিও সংযুক্ত করে মুসলিম ব্যক্তিকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে জোর করার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। তবে, প্রকৃতপক্ষে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ব্যক্তিকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে জোর করা হয়নি।

সুতরাং, ভারতে মুসলিম ব্যক্তিকে জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানোর দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির অডিওটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img