দুবাইয়ে শিশু ধর্ষণের ১৫ মিনিটের মধ্যে ধর্ষকের শাস্তি কার্যকরের দাবিটি সত্য নয়

সম্প্রতি, দুবাইয়ে ৫ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগ মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই ধর্ষককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয় শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যায়, আকাশি রঙের পোশাক পরা এক ব্যক্তিকে মাটিতে শুইয়ে গুলি করা হচ্ছে। পরে, তার নিথর দেহ একটি ক্রেনের সাহায্যে দঁড়ি দিয়ে জনসমক্ষে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ইন্সটাগ্রামে প্রচারতি দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারতি দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি দুবাইয়ে ৫ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় ১৫ মিনিটের মধ্যে ধর্ষকের শাস্তি কার্যকরের দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, এই দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ২০১৭ সালে ইয়েমেনে ৪ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দৃশ্যের। এছাড়া, ধর্ষণের মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে নয়, বরং অপরাধ সংঘটনের দেড় বছরেরও বেশি সময় পর অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

দাবিকৃত ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়ার ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক ছবির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমের দৃশ্য ও ঘটনার মিল রয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট ইয়েমেনের সানা শহরে ৪ বছর বয়সী মেয়েশিশুকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে ২২ বছর বয়সী ব্যক্তি হুসেইন আল-সাকেতকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সানার তাহরির স্কয়ারে সাকেতকে উপুড় করে শুইয়ে গুলি করা হয়। এক পুলিশ সদস্য তার পিঠে পাঁচটি গুলি চালায়, এবং মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তার মৃতদেহ একটি ক্রেনের সাহায্যে ঝুলিয়ে প্রদর্শন করা হয়।

একই ঘটনা নিয়ে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে শিশুটির বাবা ও মায়ের বক্তব্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে শিশুটির মায়ের বরাতে বলা হয়, ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে অভিযুক্ত হুসেইন আল-সাকেত ৪ বছর বয়সী মেয়েটিকে অপহরণ করে। শিশুটির মা গণমাধ্যমটিকে বলেন, “আমি খুবই খুশি যে হত্যাকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এত দীর্ঘ সময় – এক বছর আট মাস – পার হয়ে গেলেও আমি স্বস্তি অনুভব করছি। বিচার সম্পন্ন হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও পরিতৃপ্ত। আমি জানি, আমার নিষ্পাপ মেয়ে সাফা এখন শান্তিতে এবং স্বর্গে রয়েছে।”

অর্থাৎ, ঘটনাটি দুবাইয়ের নয়, বরং ইয়েমেনের এবং ধর্ষণের ১৫ মিনিটের মধ্যে নয়, বরং প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় পর অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

সুতরাং, সম্প্রতি দুবাইয়ে ৫ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে ধর্ষকের শাস্তি কার্যকর করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img