গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। নিবাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে বহিরাগত ব্যক্তিদের আনাগোনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই অংশ হিসেবে গত ৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন ব্যক্তির ছবি ও ‘ডাঃআব্দুল্লাহ আল মামুন’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “ওয় আমগো ডাক্তার, ওসমানি থিকা পাশ করছে। শিবির করতো। ওর কার্ডে লেখ ডিপার্টমেন্ট অফ কেমিস্ট্রি। কি ? কি বুঝলেন ? । কিরে ডা:মামুন , আপনার কি কাম ডাকসুতে ? কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের কার্ড গলার কেন্ আপনার ?”
অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে প্রচারিত ছবির ব্যক্তি সাবেক শিবিরকর্মী ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং তিনি বহিরাগত হওয়ার সত্ত্বেও হিসেবে গত ০৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে দায়িত্বপালন করেছেন।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবির ব্যক্তি ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বা বহিরাগত কেউ নন। প্রকৃতপক্ষে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুসন্ধানে প্রচারিত ছবিতে থাকা ব্যক্তির গলায় একটি আইডি কার্ড ঝুলতে দেখা যায়। আইডি কার্ডে নাম হিসেবে লেখা দেখতে পাওয়া যায়, ‘Dr. A.K.M Nur Alam Siddiki’. উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা ফ্যাকাল্টির তালিকায় অনুসন্ধান করলে উল্লিখিত একই নাম ‘Dr. A.K.M Nur Alam Siddiki’ নামে একজন অধ্যাপক পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটে উক্ত অধ্যাপকের ছবিও পাওয়া যায়। জানা যায়, তিনি রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অজৈব ও বিশ্লেষণমূলক রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস, ডালাস’ থেকে ন্যানোটেকনোলজিতে পিএইচডি করেছেন।

উক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত দায়িত্বরত অবস্থায় ধারণকৃত ব্যক্তির ছবির সাথে তুলনা করলে মিল পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় ছবি দুইটি একই ব্যক্তির।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৮ জুলাইয়ে সর্বশেষ আপডেট হওয়া একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে আলোচিত ব্যক্তির ছবির সংযুক্তি পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও এই ব্যক্তিকে ঢাবির রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া, প্রচারিত ছবির ব্যক্তিকে নিয়ে ফেসবুকের নানা অ্যাকাউন্ট থেকে সাম্প্রতিক নানাসময়ে পোস্ট হতে দেখা যায় যেগুলোতে উল্লেখ করা হয়, তিনি ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী (সহকারী অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ ও সহকারী প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
অপরদিকে প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত ‘ডাঃআব্দুল্লাহ আল মামুন’ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটির বিষয়ে অনুসন্ধানে অ্যাকাউন্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টটির বায়োতে বলা হয়, তিনি ভোলার লালমোহনের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু রোগ বিভাগে কনসালট্যান্ট। এছাড়াও তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাজ করেছেন এবং শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করেছেন বলে উল্লেখ করেন।

এছাড়াও, ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী ও ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছবির তুলনা করলেও দুজন আলাদা ব্যক্তি বলে প্রতীয়মান হয়।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ছবির ব্যক্তি ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বা বহিরাগত কেউ নন।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকীকে ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বা ডাকসু নির্বাচনে বহিরাগত হিসেবে দায়িত্বপালনকারী বলে দাবি করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- University of Dhaka – Dr. A. K. M. Nur Alam Siddiki
- The Daily Campus – ঢাবির নতুন সহকারী প্রক্টরের দায়িত্বে সেই শেহরীন আমিনসহ ৬ শিক্ষক
- Towhidur Rahman – Facebook Post
- ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন – Facebook Account