১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়েছে গতকাল (১২ জুলাই) শুক্রবার। দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্কুল-২ ও স্কুল পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষা নিয়ে গতকাল ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকেই প্রশ্নের ছবি ও সমাধান সম্বলিত পোস্ট নজরে আসে রিউমর স্ক্যানারের৷
আব্দুল্লাহ আল নোমান নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গণিত প্রশ্নের প্রথম পৃষ্ঠার ছবিসহ ০৩ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Rafiqul Islam Khan নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গণিত প্রশ্নের প্রথম পৃষ্ঠার ছবিসহ ১০ জুলাই রাত ৮ টা ২৯ মিনিটের একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Solaiman Chowdhury নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গণিত প্রশ্নের প্রথম পৃষ্ঠার ছবিসহ ১০ জুলাই রাত সাড়ে আটটার একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইঞ্জি. নাজমুল সরকার নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গণিত প্রশ্নের প্রথম পৃষ্ঠার ছবিসহ ১০ জুলাই রাত সাড়ে আটটার একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
Rahat Ahmed নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গণিত প্রশ্নের প্রথম পৃষ্ঠার ছবিসহ ১১ জুলাই বিকাল ৩ টা ৪৫ মিনিটের একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
একই অ্যাকাউন্ট থেকে আজ (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত শিক্ষক নিবন্ধনের কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষার প্রশ্নের ছবিসহ ১২ জুলাই বিকাল ৫ টা ৩ মিনিটের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এদিকে ৩০ জুন শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেও উপরোক্ত অ্যাকাউন্টগুলোসহ একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রশ্নফাঁসের দাবি করা হয়েছে।
বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষার প্রশ্নসহ ২৯ জুনের (পরীক্ষা হয়েছে ৩০ জুন) একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা এবং এইচএসসির প্রশ্ন আগেই ফাঁস হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে যে পোস্টগুলো করা হয়েছে সেগুলোর দাবি সঠিক নয় বরং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ওই পোস্ট সম্পাদনা করে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করে এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে শুরুতে নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন সম্বলিত পোস্টগুলোর এডিট হিস্টোরি যাচাই করে দেখা যায়, ০৩ জুলাই এইচএসসির প্রশ্ন বিষয়ক পোস্ট করার পর পরবর্তীতে গতকাল নিবন্ধন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ০২ টা ৫৯ মিনিটে ওই পোস্টে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
একই কায়দায় আজকে অনুষ্ঠিত শিক্ষক নিবন্ধনের কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের দাবিও প্রচার করা হয়েছে। এই পোস্টের এডিট হিস্টোরি যাচাই করে দেখা যায়, গতকাল ১২ জুলাই বিকাল ৫ টা ৩ মিনিটে প্রশ্নফাঁস হয়েছে দাবি করে পোস্ট করার পর পরবর্তীতে আজ নিবন্ধন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ০৩ টা ২৪ মিনিটে ওই পোস্টে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
এ সংক্রান্ত দাবির সবগুলো পোস্টেই একই প্রতারণার বিষয়টি লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার। আমরা যে পাঁচটি অ্যাকাউন্ট থেকে এই দাবি ছড়ানোর প্রমাণ পেয়েছি সেসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং Solaiman Chowdhury নামের অ্যাকাউন্টে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাথে এক ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে Rafiqul Islam Khan, Engr Nazmul Sarkar এবং ইঞ্জি. নাজমুল সরকার নামের তিনটি অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার উপপ্রেস সচিব এম. এম. ইমরুল কায়েসের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
জনাব ইমরুল কায়েস গতকালই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, “আমার ছবি ব্যবহার করে ফেক আইডি খোলা হয়েছে; ইতোমধ্যে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে বিষয়টি অবহিত করেছি। সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করছি।”
এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের দাবিতে করা পোস্টগুলোও একই পদ্ধতি অবলম্বন করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে।
তাছাড়া, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা বা এইচএসসির প্রশ্ন ফাঁস হওয়া শীর্ষক কোনো তথ্য এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত গণমাধ্যমে আসেনি।
মূলত, শিক্ষক নিবন্ধন ও এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রশ্নের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ওই পোস্ট সম্পাদনা করে ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত প্রশ্নের ছবি যুক্ত করে এই দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একাধিকবার একই কায়দায় বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের দাবি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, শিক্ষক নিবন্ধন ও এইচএসসির প্রশ্নফাঁসের দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলো মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own analysis