গত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারায় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। গত ০৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলমকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সম্প্রতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি সংবাদের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হচ্ছে, “২০১৯ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের হাতে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গী মাহফুজ আজকের প্রধান উপদেস্টার বিশেষ সহকারী এবং কথিত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নামে সরকার পতনের মাস্টারমাইণ্ড।”
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উল্লেখ্য, এর আগে তসলিমা নাসরিন একই প্রতিবেদন প্রচার করে মাহফুজ আলমকে হিযবুত তাহ্রীর নেতা হিসেবে দেখানোর দাবি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। তবে, পরবর্তীতে তিনি অবশ্য পোস্টটি একাধিকবার এডিট করেন এবং শেষ পর্যন্ত সংবাদটি সরিয়ে নেন।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের নেতা অভিযোগে আটক হওয়া মাহফুজ নামের ব্যক্তি এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ভিন্ন দুইজন ব্যক্তি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ২০১৯ সালে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে প্রচার হওয়া যে সংবাদের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। “Hizb ut-Tahrir leader Mahfuz placed on fresh remand” শিরোনামে প্রকাশিত হওয়া উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের নেতা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজকে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের একটি আদালত সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ৮ দিনের রিমান্ড দেয়। এর আগে মাহফুজসহ আরো ১৪ জনকে ৩ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, উক্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মাহফুজের কোনো ছবি বা বিশদ পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টার ও বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে সংবাদ পাওয়া যায়। জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের মহানগর প্রধানসহ ১৫ জনকে সে সময় গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আবদুল্লাহ আল মাহফুজের বয়স ৩০ বছর এবং তিনি নোভারটিস ফার্মাসিউটিক্যালসের চট্টগ্রামের টেরিটরি ম্যানেজার। তিনি হিযবুতের চট্টগ্রাম শাখার দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেও জানায় পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সদস্যদের ছবিও উক্ত সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রচার করা হয়েছে। তবে, ছবিতে প্রদর্শিত আটককৃত সদস্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে দেখা যায়নি।
Image: bdnews24.com
এ বিষয়ে সেসময় মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “Exclusive: বেরিয়ে এলো হিযবুত তাহরীর-এর মূল হোতা ও তাদের কর্মকাণ্ড” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে হিযবুত তাহরীরের নেতা মাহফুজের একটি ছবি পাওয়া যায়, যার সাথে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের ছবির সাথে অমিল পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি।
Comparison : Rumor Scanner
তাছাড়া, ২০১৯ সালে গ্রেফতারের সময়ে হিযবুত নেতা মাহফুজের বয়স দাবি করা হয়েছে ৩০ বছর৷ এদিকে একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের জন্ম ১৯৯৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর গ্রামে৷ অর্থাৎ, ২০১৯ সালে তার বয়স প্রায় ২৩-২৪ বছর ছিল। পূর্ণ নামের পাশাপাশি জন্মসালেও ভিন্নতা আছে দুই মাহফুজের।
উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম গত ১৪ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তার সম্পর্কে নানা বিষয়ের ধোঁয়াশা পরিষ্কার করে জানিয়ে একটি পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি জানান, তিনি হিযবুত তাহ্রীরের আদর্শ ও যেকোনো অগণতান্ত্রিক গোষ্ঠী বা সংগঠনের বিপরীতে আগেও ছিলেন এবং এখনও আছেন।
সুতরাং, গণমাধ্যমে ২০১৯ সালে প্রকাশিত সংবাদের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য হিসেবে রিমান্ডে গিয়েছিলেন শীর্ষক যে দাবি প্রচার করা হচ্ছে তা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- The Business Standard – Hizb ut-Tahrir leader Mahfuz placed on fresh remand
- The Daily Star – চট্টগ্রামে পুলিশের অভিযানে ১৫ ‘জঙ্গি’ আটক
- BD News24 – চট্টগ্রামে হিযবুত নেতাসহ গ্রেপ্তার ১৫
- SOMOY TV – Exclusive: বেরিয়ে এলো হিযবুত তাহরীর-এর মূল হোতা ও তাদের কর্মকাণ্ড!
- Mahfuj Alam – Facebook Post
- Rumor Scanner’s own analysis