সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবাজারে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে যে, বঙ্গবাজারের আগুনের সূত্রপাতের সাথে দুইজন ব্যক্তি জড়িত, যারা মোটরসাইকেলে করে এসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে।

টিকটকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে ও এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে ও এখানে।
উক্ত ভিডিওটি ব্যবহার করে গণমাধ্যম কালবেলায় প্রচারিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত থাম্বনেইল দেখুন:

কালবেলায় এই ভিডিওয়ের ভিত্তিতে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য দেখুন কালবেলা ফেসবুক (আর্কাইভ), কালবেলা ইউটিউব (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বঙ্গবাজারে দুইজন অজ্ঞাত ব্যক্তির বাইকে করে এসে আগুন লাগানোর দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সঙ্গে উক্ত ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রকৃতপক্ষে অন্তত এক বছর আগ থেকেই ইন্টারনেটে উক্ত ভিডিওটির অস্তিত্ব রয়েছে।
বাইকে এসে আগুন দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল SKL-Oxotic নামের একটি ফেসবুক পেইজে উক্ত ভিডিওটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

কিন্তু ভিডিওটিতে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র বা শিরোনাম উল্লেখ করা হয়নি৷ অর্থাৎ ভিডিওটি কোন প্রসঙ্গে, কোন স্থান থেকে ধারণকৃত এমন কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। তবে ভিডিওটিতে Bhoot #bhoothakaalam #bhootboss #bhootni #bhoothakaalamreview #bhootakola #bhootaaiya ইত্যাদি শীর্ষক বেশকিছু হ্যাশট্যাগ খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভিডিওটির সঙ্গে বঙ্গবাজারে আগুন লাগানোর ঘটনার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ উক্ত ভিডিওটির সঙ্গে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই।
বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি বলছে?
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি। বরং কীভাবে এই আগুন লাগল, সে বিষয়ে তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে মঙ্গলবার ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে৷ পাশাপাশি আগুন লাগার ঘটনায় কোনো সংস্থাই এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেনি।


একই বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)’র কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব-বিরোধের কারণ আছে কি না পুলিশ খতিয়ে দেখছে। তিনি বলেন, বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ ছিল। এই কারণে আগুন লেগেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অর্থাৎ বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি।
বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত আগুনের সূত্রপাতের একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন এখানে।

এক বছর আগের এই ভিডিওটি যেভাবে গণমাধ্যম ও ভুক্তভোগীদের প্রভাবিত করেছে
বঙ্গবাজারে সংঘটিত এই আগুনের ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল জাতীয় দৈনিক কালবেলা ‘বঙ্গবাজারে দুইজন বাইকে এসে আগুন লাগিয়েছে: বলছেন ব্যবসায়ীরা’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনটির ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড সময়ে একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি একটু আগে দেখলাম নেটে, দুইজন বাইকে এসে আগুন লাগাই দিয়া গেল গা।’

একই প্রতিবেদনের ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড সময়ে আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘সকালবেলা নেটে দেখছি যে, একজন আসলো। আসার পর একজন নামছে, এরপর আগুন লাগাই দিয়া উধাও।’

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এই ভুক্তভোগী বলেন, ‘এটা কিভাবে বলবো? আমরা সন্দেহ করছি, তারাই কাজটা করছে।’
অর্থাৎ উক্ত ভুক্তভোগীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক বছর পূর্বের তথ্যসূত্রহীন ভিডিওটিকেই বঙ্গবাজারের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কেবল ভুক্তভোগীরাই নয়, কালবেলা পত্রিকাটিও তাদের প্রতিবেদনের থাম্বনেইলে আলোচিত ভিডিওটি ব্যবহার করে। তবে পরবর্তীতে গণমাধ্যমটি থাম্বনেইলটি সম্পাদনা করে আলোচিত ভিডিওয়ের অংশটি সরিয়ে ফেলে।

মূলত, গত ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মার্কেটটির প্রায় পাঁচ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দাবি করা হয় যে, দুইজন ব্যক্তি বাইকে করে এসে বঙ্গবাজারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাইকে এসে বঙ্গবাজারে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি অন্তত এক বছরের পুরানো। এছাড়া আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস সহ তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
সুতরাং, এক বছর পুরোনো ভিডিওকে বঙ্গবাজারে দুইজন অজ্ঞাত ব্যক্তির বাইকে করে এসে আগুন লাগানোর ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- SKL-Oxotic: Old facebook video goes viral (আর্কাইভ)
- bdnews24: বঙ্গবাজারে আগুন লাগল কীভাবে, তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের কমিটি
- Jamuna TV: বঙ্গবাজারে আগুন, তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
- DW Bangla: বঙ্গবাজারে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে সিআইডি
- Prothom Alo (1): তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হবে: সংসদে প্রতিমন্ত্রী
- Prothom Alo (2): বঙ্গবাজারে আগুন: ৭০০ কোটি টাকা চায় দোকান মালিক সমিতি
- DhakaTimes24: বঙ্গবাজারে আগুনের পেছনে ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার
- Ekattor TV: যেভাবে আগুন লেগেছিল বঙ্গবাজারে