বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে অন্যতম আলোচিত ও সমালোচিত দুই জুটির একটি হলো টিকটকার মামুন ও লায়লা। অন্যটি হলো ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬০ বছর বয়সী সাবেক দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ এবং তার স্ত্রী ও ঐ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সিনথিয়া ইসলাম তিশা।
সম্প্রতি, এই দুই জুটির দুইজনকে ঘিরে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যায় প্রিন্স মামুন ও সিনথিয়া ইসলাম তিশা হিন্দু বিয়ের রীতি অনুযায়ী সেজে নাচছেন। ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তিশা এবং মামুন বিয়ে করেছেন।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)
টিকটকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মামুন ও তিশা বিয়ের সাজে নাচের ভাইরাল ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং এটি একটি ডিপফেক ভিডিও। প্রকৃতপক্ষে, মূল ভিডিওতে মামুনের পাশে লায়লা ছিলেন। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় লায়লার চেহারা পরিবর্তন করে তার স্থানে তিশার মুখ বসানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সূত্রপাত খোঁজার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ এই বিষয়ে ভাইরাল একটি ভিডিওতে ‘jibon 2.5’ নামের একটি জলছাপ লক্ষ্য যায়। এই সূত্রে ‘alaminkpzofficial’ নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। গত ২ মার্চ এই টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে আলোচ্য ভিডিওটি (আর্কাইভ) প্রচার হতে দেখা যায়।
উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে গত ২৪ এপ্রিল প্রকাশিত ঠিক একই রকম একটি ভিডিও (আর্কাইভ) পাওয়া যায়, তবে এই সংস্করণে মামুনের স্থলে খন্দকার মুশতাক আহমেদকে এবং তিশার পরিবর্তে লায়লাকে দেখতে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে, আলোচ্য ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০২৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি লায়লার ভেরিফাইড ইউটিউব চ্যানেলে মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। মূল ভিডিওতে মামুনের পাশে তিশা নয়, বরং লায়লাকে দেখা যায়।
সুতরাং, প্রযুক্তির সাহায্যে মামুনের পাশে থাকা লায়লার মুখাবয়ব পরিবর্তন করে তিশার মুখাবয়ব সংযোজন করে আলোচ্য ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ, এটি একটি ডিপফেক ভিডিও।
ডিপফেক হল বাস্তবসম্মত দেখতে কিন্তু নকল বা কিছুটা পরিবর্তিত কন্টেন্ট যা ভিডিও বা অডিওর উপাদান সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়। ডিপফেক ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তির মুখের অবয়ব বা ভয়েসকে অন্য কারোর সাথে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই প্রযুক্তির সহায়তায় একজন ব্যক্তির এমন কিছু ভিডিও বা অডিও কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব যা তিনি নিজে বলেননি বা করেননি।
মূলত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচিত দুই জুটি হলো মামুন-লায়লা এবং মোশতাক-তিশা। সম্প্রতি মামুন-তিশা বিয়ে করেছেন এবং বিয়ের পর হিন্দু বিয়ের রীতি অনুযায়ী সেজে নাচছেন দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল এই ভিডিওটি মূলত ডিপফেক প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। মূল ভিডিওতে মামুনের পাশে ছিলেন লায়লা, কিন্তু প্রযুক্তির সাহায্যে লায়লার মুখাবয়ব পরিবর্তন করে তাতে তিশার মুখাবয়ব যোগ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও মামুন এবং তিশাকে জড়িয়ে ডিপফেক ভিডিও প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, কনটেন্ট ক্রিয়েটর মামুন ও আলোচিত ছাত্রী তিশার বিয়ের পর নাচের দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত।
তথ্যসূত্র
- Blue Fairy Laila Youtube Channel: Blue Fairy Laila & Prince Mamun Bridal Photoshoot
- Rumor Scanner’s Own Analysis