ডিপফেকের শিকার কনটেন্ট ক্রিয়েটর মামুন ও ভাইরাল ছাত্রী তিশা

বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে অন্যতম দুই জুটির একটি হলো টিকটকার মামুন ও লায়লা। অন্যটি হলো ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬০ বছর বয়সী সাবেক দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ এবং তার স্ত্রী সিনথিয়া ইসলাম তিশা। 

সম্প্রতি, এই দুই জুটিকে ঘিরে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যায় যে প্রিন্স মামুন ও সিনথিয়া ইসলাম তিশা একই বিছানায়। ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তিশা এখন মামুনের। 

মামুন ও ভাইরাল

উক্ত ভিডিও সম্বলিত ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

এই বিষয়ে ফেসবুকে ভাইরাল একটি ভিডিও প্রায় ৫৪ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৬ হাজার ভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে, ভিডিওটি ১০১ বার শেয়ার করা হয়েছে এবং এতে ৭৭৩টি মন্তব্য করা হয়েছে।

একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 
এ বিষয়ে টিকটকে ভাইরাল একটি ভিডিও ৫৭ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে, ভিডিওটি ৭৬২ বার শেয়ার করা হয়েছে এবং এতে ১ হাজার ৩ শত মন্তব্য করা হয়েছে।

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মামুন ও তিশা এক বিছানায় থাকার ভাইরাল ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং এটি একটি ডিপফেক ভিডিও। প্রকৃতপক্ষে, মূল ভিডিওতে মামুনের পাশে ছিলেন লায়লা। প্রযুক্তির সাহায্যে লায়লার চেহারা পরিবর্তন করে তার স্থানে তিশার মুখ বসানো হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সূত্রপাত খোঁজার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ এই বিষয়ে ভাইরাল একটি ভিডিওতে ‘jibon 2.5’ নামের একটি জলছাপ লক্ষ্য যায়। এই সূত্রে ‘alaminkpzofficial’ নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এই টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে আলোচ্য ভিডিওটি (আর্কাইভ) প্রচার হতে দেখা যায়।

উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে গত ৩ এপ্রিল প্রকাশিত ঠিক একই রকম একটি ভিডিও (আর্কাইভ) পাওয়া যায়, তবে এই সংস্করণে মামুনের পাশে তিশার পরিবর্তে খন্দকার মুশতাক আহমেদকে দেখা যায়।

পরবর্তীতে, আলোচ্য ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট লায়লার ভেরিফাইড ইউটিউব চ্যানেলে মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। মূল ভিডিওতে মামুনের পাশে তিশা কিংবা মুশতাক নয়, বরং লায়লাকে দেখা যায়। 

Video Comparison: Rumor Scanner.

২০২১ সালের ২ জুলাই লায়লার ফেসবুক পেজ এবং ৩ জুলাই ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এই ভিডিওটির বর্ধিত অংশ প্রচারিত হয়। মূল ভিডিওতে পরবর্তী ভ্লগে মাসুম ও লায়লা কীভাবে গ্রামে গিয়েছিলেন তা দেখানো হবে বলে জানান মামুন।

এই সূত্রে ২০২৩ সালের ৯ জুলাই লায়লার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ‘ঈদে বাড়ীতে যাওয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

সুতরাং, প্রযুক্তির সাহায্যে মামুনের পাশে থাকা লায়লার মুখাবয়ব পরিবর্তন করে তিশার মুখাবয়ব সংযোজন করে আলোচ্য ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ, এটি একটি ডিপফেক ভিডিও।

ডিপফেক হল বাস্তবসম্মত দেখতে কিন্তু নকল বা কিছুটা পরিবর্তিত কন্টেন্ট যা ভিডিও বা অডিওর উপাদান সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়। ডিপফেক ভিডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তির মুখের অবয়ব বা ভয়েসকে অন্য কারোর সাথে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই প্রযুক্তির সহায়তায় একজন ব্যক্তির এমন কিছু ভিডিও বা অডিও কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব যা তিনি নিজে বলেননি বা করেননি।

মূলত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচিত দুই জুটি হলো মামুন-লায়লা এবং মোশতাক-তিশা। সম্প্রতি মামুন-তিশা একই বিছানায় দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভাইরাল এই ভিডিওটি মূলত ডিপফেক প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। মূল ভিডিওতে মামুনের পাশে ছিলেন লায়লা, কিন্তু প্রযুক্তির সাহায্যে লায়লার মুখাবয়ব পরিবর্তন করে তাতে তিশার মুখাবয়ব যোগ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বেও একাধিক ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেসব প্রতিবেদন একত্রে দেখুন এখানে

সুতরাং, মামুন ও তিশা এক বিছানায় থাকার দৃশ্য দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img