ভিডিওটিতে শিক্ষার্থী কর্তৃক হেনস্তার শিকার হওয়া ইউনিফর্ম পরিহিত ব্যক্তিরা চবির নিরাপত্তা কর্মী, সেনাবাহিনী নয়

গত ৩১ আগস্ট দিবাগত রাতে দেরি করে ভাড়া বাসায় ফেরা নিয়ে ভবনের দারোয়ানের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে তার সাথে দারোয়ান খারাপ আচরণ করলে 

আক্রান্ত নারী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে ক্যাম্পাস থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগ্‌বিতণ্ডা থেকে এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। যাতে রাতেই অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন, এদের মধ্যে কয়েকজনকে ভয়াবহভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে বেশ সময় ব্যয় হয়। যার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের নেতাকর্মীরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের হেনস্তা করেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

প্রচারিত পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের নেতাকর্মীরা সেনাবাহিনীকে হেনস্তা করলেও তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেননি।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

এক্স (সাবেক টুইটার)- এ প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওতে শিক্ষার্থী কর্তৃক হেনস্তার শিকার হওয়া ইউনিফর্ম পরিহিত এই ব্যক্তিরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য নন। বরং, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষের মুহুর্তে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালনের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীদের হেনস্তা করা হয়। সেই ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার। এতে ভিডিওতে দেখতে পাওয়া সেনাবাহিনীর পোশাকের আদলে তৈরি পোশাক পরিহিত ব্যক্তিদের হাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো দেখতে পাওয়া পাওয়া যায় যা সেনা সদস্যদের পোশাকে থাকে না। এছাড়াও ভিডিওর শেষাংশে ভিডিও ধারণকারী ওই বাহিনীর সাথে সাদা পোশাকে থাকা একজন ব্যক্তিকে তাদের নিরাপত্তা অফিসার বলে সম্বোধন করেন। 

Comparison by Rumor Scanner 

প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জোবরা গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তর থেকে শিক্ষার্থীরা রামদা, দা, রড, ছুরিসহ বেশকিছু দেশিয় অস্ত্র লুট করে। লুট হওয়া এসব অস্ত্র ফিরিয়ে দিতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সাক্ষারিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়, লুট হওয়া এসব অস্ত্র ছাত্রলীগের আমলে হলগুলো থেকৈ জব্দ করা হয়। প্রতিবেদনটির ফিচার ইমেজে সেসময় অস্ত্র উদ্ধারের একটি ছবি দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে আলোচিত ভিডিওর মত একই পোশাকধারী ব্যক্তিদের দেখতে পাওয়া যায়। তাদের পোশাকের হাতেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো দেখা যায়। এ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীর পোশাকের আদলে তৈরি পোশাক পরিহিত এই ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের সাথে জড়িত।

Screenshot: Prothom Alo

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অর্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক Muhammad Muntaj Ali-এর ফেসবুক পেজ গত ৩১ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook 

পোস্টটিতে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত সেই পোশাকধারী ব্যক্তিদের ছবি যুক্ত করে জানান, এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের অধীনে থাকা বিশেষ নিরাপত্তা ফোর্সের সদস্য। পোস্টটির মাধ্যমে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর নানা দূর্বলতা তুলে ধরার পাশাপাশি বাহিনীকে কিভাবে সংস্কার করা যায় সেবিষয়ক পরমার্শ প্রদান করেন। 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে সেনাবাহিনী নয় বরং, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীকে হেনস্তা করতে দেখা যায়। 

সুতরাং, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কর্তৃক সেনাবাহিনীর সদস্যদের হেনস্তার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img