গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলা হয়, এতে ২৬ জন নিহত হন। এর জেরেই সামরিক উত্তেজনায় জড়ায় ভারত-পাকিস্তান। গতকাল ৬ মে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ভারত দাবি করে, ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে এক অভিযানে তারা জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তইয়েবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। ভারতের ভাষ্য, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর গত এপ্রিলের হামলার জবাবেই এই অভিযান। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, হামলাগুলো বেসামরিক এলাকায়, এমনকি মসজিদেও আঘাত হানে। এতে বেসামরিক প্রাণহানি ও আহতের ঘটনা ঘটেছে বলে ইসলামাবাদ দাবি করেছে। পাকিস্তান আরও জানায়, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এরই প্রেক্ষিতে ‘পাকিস্তানের কয়েকটি স্থানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা’ শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি যুক্ত করে দেশের কতিপয় গণমাধ্যম তাদের ওয়েবসাইট ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে সংবাদ প্রচার করেছে।

উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন নিউ এজ, প্রথম আলো, কালবেলা, জনকণ্ঠ, সমকাল, দেশ টিভি, সময় টিভি (ফেসবুক), একুশে টিভি (ফেসবুক) বাংলানিউজ২৪, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, যমুনা টিভি (ইউটিউব), চ্যানেল২৪ (ইউটিউব), এটিএন নিউজ (ইউটিউব), ঢাকা মেইল, রাইজিং বিডি, দৈনিক করতোয়া, রূপালী বাংলাদেশ।

এছাড়া, এই ছবিটি ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ করে পরবর্তীতে ছবিটি সরিয়ে নিয়েছে দ্য ডেইলি স্টার, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এবং আর টিভি।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি ভারত কর্তৃক পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনার নয় বরং, এটি ২০২৩ সালের গাজায় ইসরায়ালি বোমা হামলার ঘটনার ছবি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত প্রতিবেদনগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বেশকিছু প্রতিবেদনে ব্যবহৃত আলোচিত ছবিটি পাকিস্তানের গণমাধ্যম Dawn থেকে সংগৃহীত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত সূত্র ধরে Dawn এর ফেসবুক পেজে ০৭ মে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। ফটোকার্ডটিতে আলোচিত ছবিটি যুক্ত করে ‘ভারত রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের ৫ টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে (অনূদিত)’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে আফগানিস্তানের গণমাধ্যম Kabul News এর এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়৷ উক্ত ভিডিওচিত্রের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাদৃশ্য রয়েছে।

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ফিলিস্তিনি মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর রাত থেকে গাজায় ইসরায়েলের তীব্র বোমাবর্ষণে নারী ও শিশুসহ ৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও শতাধিক মানুষ ধ্বংস হওয়া ভবনের নিচে আটকে আছে (অনূদিত)। ভিডিওটি উল্লিখিত বোমাবর্ষণের ঘটনার বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এছাড়া, সামাজিক মাধ্যম রেডিটে ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত একটি পোস্টেও একই ভিডিও ও তথ্য পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ঘটনার নয়।
সুতরাং, সম্প্রতি পাকিস্তানে সংঘটিত ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চিত্র দাবিতে গাজার ইসরায়েলি বোমা হামলার পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Kabul News – X Post
- Modern Socialist – Reddit Post