গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখে গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী গোপালগঞ্জ সদরের বেদগ্রামে অনুষ্ঠিত এক পথসভা শেষে নিজ গ্রাম টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায় একদল লোক তার গাড়িবহরে হামলা করে যার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিএনপি। উক্ত ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়, হামলার ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ ২ জন নিহত হয়েছেন। তন্মধ্যে কিছু সংবাদমাধ্যম নিহত একজনের নাম শওকত আলী দিদার বলে উল্লেখ করেছে এবং কিছু সংবাদমাধ্যম এর সাথে অপর নিহত ব্যক্তি হিসেবে লিটন নামের একজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছে।
উক্ত দাবিতে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন যুগান্তর, কালবেলা, দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, মানবকণ্ঠ, ঢাকা পোস্ট, জাগোনিউজ২৪, ডেইলি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জার্নাল, আমার সংবাদ, সিলেট নিউজ টাইমস, বিএনএ নিউজ২৪, বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট, ভোরের পাতা, কুমিল্লার জমিন, দেশের পত্র, কালের বিবর্তন, সুবর্ণবাংলা।
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতেও দুইজন নিহতের দাবি করা হয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন (১,২)
কিছু সংবাদমাধ্যমে উক্ত হামলায় নিহত নেতার সংখ্যা তিনজনও বলে দাবি করা হয়েছে। এমন দাবিতে প্রচারিত সংবাদ দেখুন ডেইলি বাংলাদেশ, খবর সংযোগ।
উক্ত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার গাড়িবহরে হওয়া হামলায় ২ জন বা ৩ জন নিহত হননি, বরং ১ জন নিহত হয়েছেন এবং লিটন নামে যে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে নিহত দাবি করা হয়েছে, তিনি গুরুতর আহত হলেও নিহত হননি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বিএনপি মিডিয়া সেল এর ফেসবুক পেজে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখের একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে হওয়া হামলায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার নিহত হয়েছেন এবং আরো অন্তত ৩৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। উক্ত পোস্টে লিটন নামের কোনো নেতার বা ভিন্ন কারোর নিহতের বিষয়ে কোনোকিছু উল্লেখ করা হয়নি।
উক্ত ঘটনার বিষয়ে ঐদিনই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিবৃতি বিএনপি মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করা হয়। উক্ত বিবৃতিতেও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শওকত আলী দিদার নামের একজন উক্ত হামলায় নিহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
বিএনপি মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে তার পরেরদিন তথা ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখেও এ বিষয়ে একটি পোস্ট করা হয় যেখানে একজন নিহত হওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানের সাথে। তিনি জানান, উক্ত হামলার ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন নেতা নিহত হয়েছেন। রিউমর স্ক্যানারকে একই তথ্য জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান।
উল্লেখ্য, উক্ত হামলায় ২ জন নিহত দাবি করা কিছু সংবাদমাধ্যম নিহত অপর ব্যক্তি হিসেবে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লিটন নামের একজনের কথা উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এই বিষয়ে নাজমুল হাসানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, লিটন নিহত হননি৷ তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন এবং এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পাশাপাশি, কিছু সংবাদমাধ্যমে উক্ত হামলার ঘটনায় তিনজন নিহত হওয়ার দাবিতে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তি হিসেবে শওকত আলী দিদার ও লিটনসহ তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে সবুজ নামের একজন নেতাকে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং, গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার গাড়িবহরে হওয়া হামলায় ২ জন বা ৩ জন নিহত হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি অর্ধসত্য।
তথ্যসূত্র
- BNP Media Cell – Facebook Post
- BNP Media Cell – Facebook Post
- BNP Media Cell – Facebook Post
- Rumor Scanner’s own analysis