গত জুনে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের প্রধান মসজিদের সামনে প্রকাশ্যে কুরআন শরিফে আগুন দেন এক ইরাকি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি। সম্প্রতি ফেসবুকের ভাইরাল কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, উক্ত ব্যক্তির হাতে কুষ্ঠরোগ হয়েছে৷
ফেসবু্কে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুইডেনে কুরআন পোড়ানো ব্যক্তির কুষ্ঠ রোগ হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং সালওয়ান মোমিকা নামক উক্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং তাকে নিয়মিত ফেসবুকে সক্রিয় থাকতে দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে শুরুতে আলোচিত তথ্যটির সূত্র অনুসন্ধানে গত ০৪ জুলাই Mazdul Islam নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক পোস্ট (আর্কাইভ) নজরে আসে আমাদের।
জনাব মাজদুল তার পোস্টে লিখেছেন, “সুইডেনে পবিত্র কুরআন শরীফ পুরানো, সেই রাজবুস নামক বেধর্মী কুলাঙ্গার জাহান্নামের কীটের দুই হাতে কুষ্ঠ রোগ বের হয়েছে, এবং দুদিন হল বিছানা থেকে উঠতে পারছে না, আল্লাহর আরো গজবের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।”
জনাব মাজদুল কোনো সূত্র ছাড়াই উক্ত পোস্টে আলোচিত দাবিটি উত্থাপন করেছেন।
উক্ত দাবির সত্যতার খোঁজে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে উক্ত ব্যক্তির বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সুইডেনের স্টকহোম শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদের বাইরে কোরআনের একটি কপিতে গত ২৮ জুন ঈদের দিন আগুন ধরিয়ে দেন সালওয়ান মোমিকা নামের উক্ত ব্যক্তি। তিনি সুইডেনে বসবাসরত একজন ইরাকি বলে জানানো হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
কিন্তু বিবিসির ০৬ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে সালওয়ান মোমিকার কুষ্ঠ বা তার শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এমনকি কুরআন পোড়ানোর সাম্প্রতিক এই ঘটনা পরবর্তী সময়ে মোমিকার বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদনেই তার শারীরিক অসুস্থতা জনিত কোনো তথ্য উল্লেখ পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম।
এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে সালওয়ান মোমিকার ফেসবুক প্রোফাইল (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
জনাব মোমিকার প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি নিয়মিতই কুরআন পোড়ানোর বিষয়ক আলোচিত প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছেন।
প্রোফাইলে গত ০৯ (আর্কাইভ) এবং ১৩ (আর্কাইভ) জুলাই দুইটি ভিডিও পোস্ট করেছেন যেখানে তার হাতে কোনো কুষ্ঠরোগের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। ভিডিওগুলোতে তিনি কুরআন পোড়ানোর ঘটনা পরবর্তী বিষয়ে আলোকপাত করেছেন যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, ভিডিওগুলো অতি সম্প্রতি ধারণ করা।
গত ১৪ জুলাই প্রকাশিত এক পোস্টে (আর্কাইভ) তিনি আগামী ২০ জুলাই ফের কুরআন পোড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে সালওয়ান মোমিকার সাথে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে এই ফ্যাক্টচেক প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত জুনে সুইডেনের কুরআন শরিফে আগুন দেন সালওয়ান মোমিকা নামে এক ব্যক্তি। সম্প্রতি ফেসবুকে দাবি করা হয়েছে, উক্ত ব্যক্তির হাতে কুষ্ঠরোগ হয়েছে৷ কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। উক্ত ব্যক্তি তার ফেসবুক প্রোফাইলে নিয়মিত স্ট্যাটাস এবং ভিডিও পোস্ট করে যাচ্ছেন। আগামী ২০ জুলাই ফের কুরআন পোড়ানোর ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন তিনি।
সুতরাং, সুইডেনে সম্প্রতি কুরআন পোড়ানো ব্যক্তির কুষ্ঠ রোগ হওয়া শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- BBC Bangla: সুইডেনে কেন বার বার কোরআন পোড়ানো হয়
- Arab News: As uncertainty shrouds his future, a past full of contradictions haunts Qur’an burner Salwan Momika
- Salwan Momika: Facebook Profile
- Rumor Scanner’s own analysis