মঙ্গলবার, অক্টোবর 8, 2024

নেদারল্যান্ডসে পাখি মৃত্যুর সঙ্গে ফাইভ-জি’র তরঙ্গ পরীক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই

গেল কয়েক বছর ধরেই “নেদারল্যান্ডসে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ জি চালুর প্রতিক্রিয়ায় কয়েকশ পাখি মারা গেছে।” শীর্ষক একটি দাবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকের এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

Screenshot source: Facebook 

একই দাবিতে অন্যান্য বছরের পোস্ট দেখুন 

২০২২ – এখানে (আর্কাইভ)

২০২১ – এখানে (আর্কাইভ)

২০২০ – এখানে (আর্কাইভ)

২০১৯ – এখানে (আর্কাইভ)

২০১৮ – এখানে (আর্কাইভ)

একই দাবিতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন দেখুন যুগান্তর, দৈনিক সংগ্রাম, কালের কণ্ঠ, ঢাকা টাইমস২৪, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইনকিলাব, বিডি মর্নিং, ক্যাম্পাস লাইভ২৪, ডেইলি বাংলাদেশ, বার্তা২৪

Screenshot source: Facebook 

একই দাবিতে ২০১৮ সালে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন দেখুন নিউজ১৮, সংবাদ প্রতিদিন

Screenshot source: Facebook 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নেদারল্যান্ডসে ২০১৮ সালে পরীক্ষামূলক ফাইভ জি চালুর কারণে পাখি মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং সে সময় সংশ্লিষ্ট স্থানে ফাইভ জি নেটওয়ার্কের কোনো পরীক্ষা হয়নি এবং পাখিদের মৃত্যুর পেছনে ফাইভ জির কোনো সম্পর্কও ছিল না।

খবরের সূত্রের খোঁজে

উক্ত বিষয়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো পড়ে দেখেছি আমরা।  কালের কণ্ঠ ২০১৮ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লিখেছে, “উচ্চগতির ইন্টারনেট ফাইভ জি নেটওয়ার্ক পরীক্ষার সময়ে শত শত পাখির মৃত্যু ও অন্যান্য প্রাণীর অস্বাভাবিক আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে নেদারল্যান্ডসে। হঠাৎ করেই গাছের ডালে বসে থাকা পাখিগুলো মরে নিচে পড়তে থাকে। এভাবে প্রায় তিনশ পাখি মারা পড়েছে বলে পরিবেশবাদীরা দাবি করছেন। প্রিন্সিপিয়া সায়েন্টিফিক ইন্টারন্যাশনাল নামে এক সাময়িকীতে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।” 

Screenshot source: Kaler Kantho 

এই তথ্যের সূত্র ধরে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘Principia Scientific International’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে উক্ত তথ্যের সূত্র হিসেবে জুন কুলে (John Kuhles) নামক এক ব্যক্তির একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দেওয়া হয়েছে। 

Screenshot source: Principia Scientific International

ফেসবুকে ২০১৮ সাল থেকেই ”পরীক্ষামূলক ৫জি চালু হতেই নেদারল্যান্ডসে মৃত্যু কয়েকশো পাখির” শিরোনামে একটি পত্রিকার প্রতিবেদনের প্রিন্ট সংস্করণের কপি প্রচার হয়ে আসছে। 

প্রতিবেদনে একই ঘটনায় খবরের সূত্র হিসেবে ‘Galactic Connection’ নামে একটি ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

Screenshot source: Facebook

আমরা ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর প্রকাশিত ‘Galactic Connection’ এর  প্রতিবেদনটি পড়ে দেখেছি, যেখানে জন কুলের বরাতেই আলোচিত তথ্যগুলোর উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের খবরের সূত্র হিসেবে ‘Health Nut News’ নামক একটি সাইটের লিংক উল্লেখ করা হয়েছে। 

‘Health Nut News’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর প্রকাশিত উক্ত প্রতিবেদনেও জন কুলের ফেসবুক পোস্টের বরাতে আলোচিত তথ্যগুলোর উল্লেখ পাওয়া যায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম The Quint বলছে, 

অর্থাৎ, নেদারল্যান্ডসে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ জি চালুর প্রতিক্রিয়ায় কয়েকশ পাখি মারা গেছে। শীর্ষক তথ্যটির সূত্রপাত জন কুলে নামক এক ব্যক্তি।

জন কুলের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি ফাইভ জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করার বিষয়ে বেশ সোচ্চার। এই দাবি সম্পর্কিত তার একটি ফেসবুক গ্রুপ, টুইটার অ্যাকাউন্ট এবং ওয়েবসাইট রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে তার বায়ো’তে। এসব মাধ্যমে তিনি ফাইভ জি বন্ধের বিষয়ে নানা প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। 

Screenshot source: Facebook 

পাখি মৃত্যুর পেছনে ফাইভ জির সম্পর্ক আছে? 

নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দৈনিক Algemeen Dagblad (AD) এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের পহেলা নভেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেসময় দেশটির হেগ শহরের হাইগেন্সপার্কে অন্তত ২৯৭টি পাখি মারা যায়। পাখিদের মৃত্যুর কারণ জানতে পাখিদের রক্ত পরীক্ষার বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও প্রতিবেদনে ফাইভ জি বিষয়ক কোনো তথ্য নেই।

Screenshot source: AD

২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের টেলিযোগাযোগ এন্টেনা সংক্রান্ত ‘Antenna Bureau’ এক প্রতিবেদনে জানায়, হাইগেন্সপার্কে পাখিদের মৃত্যুর পেছনে ফাইভ জি পরীক্ষার কোনো যোগসূত্র নেই। তাছাড়া সেসময় ফাইভ জির কোনো পরীক্ষাও হয়নি বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

Screenshot source: Antenna Bureau

এ বিষয়ে মার্কিন ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ‘Snopes’ নেদারল্যান্ডসের ফাইভ জি নেটওয়ার্ক সংশ্লিষ্ট বেশকিছু কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছে। তারা সকলেই জানিয়েছেন, পাখিগুলো যে সময়ে মারা যায় সেসময়ে এর আশেপাশের এলাকায় ফাইভ জির কোনো পরীক্ষা করা হয়নি।

Screenshot source: Snopes 

অনুসন্ধানে নেদারল্যান্ডসের টেলিকম বিষয়ক সাইট ‘Telecompaper’ এ ২০১৮ সালের ২৮ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন হাইগেন্সপার্কের কাছে একদিনের একটি ফাইভ জি পরীক্ষা হয়েছিল। কিন্তু এই পরীক্ষার কারণে পরবর্তীতে কোনো পাখি মারা গেছে শীর্ষক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

মূলত, ২০১৮ সাল থেকে নেদারল্যান্ডসে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ জি চালুর প্রতিক্রিয়ায় কয়েকশ পাখি মারা গেছে শীর্ষক একটি দাবি গণমাধ্যম ও ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, সে সময় সংশ্লিষ্ট স্থানে ফাইভ জি নেটওয়ার্কের কোনো পরীক্ষা হয়নি। নেদারল্যান্ডসের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, সেসময় পাখিদের মৃত্যুর পেছনে ফাইভ জি পরীক্ষার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। 

সুতরাং, নেদারল্যান্ডসে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ জি চালুর প্রতিক্রিয়ায় কয়েকশ পাখি মারা গেছে শীর্ষক একটি দাবি গণমাধ্যম ও ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে; ‌যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img