তুরস্কের বন্দীদের ভিডিওকে হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলি কর্মকর্তা দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সংঘাতকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, নয়জন আটক ব্যক্তির নাম এবং পদবী জানতে চাওয়া হচ্ছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, এই ভিডিওটি হামাস প্রকাশ করেছে এবং ভিডিওতে যে ব্যক্তিদের দেখানো হচ্ছে, তারা ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা মোসাদের কর্মকর্তা। এরা হামাসের হাতে বন্দী।

তুরস্কের

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি হামাস প্রকাশ করেনি এবং ভিডিওতে দেখানো ব্যক্তিরা হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা মোসাদের কর্মকর্তাও নন। বরং ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর গ্রেফতার হওয়া সামরিক কর্মকর্তাদের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির কিছু কি ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে তুরস্কের ইংরেজি দৈনিক Daily Sabah এর এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই প্রকাশিত এক ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: X

এই ভিডিওটির বিবরণী থেকে জানা যায়, সে সময় তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ডদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়ার আগে আঙ্কারা পুলিশ সদর দফতরে এনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

পরবর্তীতে ডেইলি সাবাহ’র ওয়েবসাইটে ১৭ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই রাতে তুরস্কে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়। এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড সামরিক কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আলোচিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিদের ছবি এই প্রতিবেদনেও রয়েছে।

আলোচিত ভিডিওতে বন্দী এক ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে, যিনি তার পরিচয় আকিন ওজতুর্ক (Akin Ozturk) বলে জানিয়েছেন।

এই নামটি কিওয়ার্ড সার্চ করে বিবিসির সে বছরের (২০১৬) ১৮ জুলাই একই ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও একই ব্যক্তির একই পোশাক পরিহিত ছবি পাওয়া যায়। বিবিসি বলছে, তিনি তুরস্কের এয়ার ফোর্সের সাবেক কমান্ডার। 

Screenshot comparison: Rumor Scanner 

এটা থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, ভিডিওতে দেখানো ব্যক্তিরা ইসরায়েলের কোনো সামরিক কর্মকর্তা নয়।  

মূলত, গত ০৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, নয়জন আটক ব্যক্তির নাম এবং পদবী জানতে চাওয়া হচ্ছে। আলোচিত এই ভিডিওটির বিবরণীতে দাবি করা হচ্ছে, এই ভিডিওটি হামাস প্রকাশ করেছে এবং ভিডিওতে যে ব্যক্তিদের দেখানো হচ্ছে, তারা ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা মোসাদের কর্মকর্তা। এরা হামাসের হাতে বন্দী। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জেনেছে, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। এমন কি এই ভিডিওর সাথে ফিলিস্তিন বা ইসরায়েলেরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর গ্রেফতার হওয়া সামরিক কর্মকর্তাদের ভিডিও এটি, যা ভিন্ন দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

সুতরাং, তুরস্কের বন্দীদের ভিডিওকে হামাসের হাতে বন্দী সামরিক ও গোয়েন্দা মোসাদের কর্মকর্তা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img