জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা পুনরায় চালু হওয়ার গুজব 

সম্প্রতি, অষ্টম শ্রেণির স্টুডেন্টরা রেডি আছো তো আবারো শুরু হচ্ছে JSC পরিক্ষা শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি এই ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় তিন হাজার ৪০০ টি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরনায় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা চালু হওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং কোনোপ্রকার তথ্যসূত্র ছাড়া জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত পুরোনো সংবাদের ফুটেজ ব্যবহার করে আলোচিত দাবি সম্বলিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

তথ্য যাচাই

অনুসন্ধানের শুরুতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে জাতীয় দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি “জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনে ২০২৩ সাল থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছে।

একই সময়ে মূলধারার অন্যান্য(, ,) গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

উল্লেখ্য, নতুন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর মহিবুল হাসান চৌধুরী একাধিকবার (,) প্রয়োজনে নতুন কারিকুলাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন। তবে পুনরায় পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা ফিরার ব্যাপারে বা নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেননি তিনি। 

গত জানুয়ারি মাসে “নতুন কারিকুলাম আবার ফিরে যাচ্ছে আগের পরীক্ষা পদ্ধতিতে! ২০২৪ ব্যাচ থেকে PSC ও JSC পরিক্ষা নেওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা” শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়েরের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তখন তিনি জানান, ‘এটা গুজব। এমন কোনো নির্দেশনা নাই।’

সেসময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও বিষয়টিকে গুজব বলে জানানো হয়।

Screenshot: Facebook.

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ব্যক্তি  প্রচার করছেন যে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২৪ সালে জেএসসি এবং পিএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই তথ্যটি মিথ্যা ও বানোয়াট।  এ ধরনের তথ্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করা হল।”

ভিডিও যাচাই 

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচারিত ক্লিপটির বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

অনুসন্ধানে দেশিয় বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম বৈশাখী টিভির ইউটিউব চ্যানেলে  প্রচারিত শর্মার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০১৯ সালের ০২ নভেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, এটি ২০১৯ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হওয়া নিয়ে একটি সংবাদ প্রতিবেদন।

মূলত, ২০১৯ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরুর দিন  দেশিয় বেসরকারি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম বৈশাখী টিভিতে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি সেই প্রতিবেদনের ফুটেজ সংগ্রহ করে আবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হচ্ছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা পুনরায় চালু হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, পুনরায় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা চালু হচ্ছে দাবি ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img