সম্প্রতি, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে বললো রাষ্ট্রপতি – ক্ষেপেছে ওবায়দুল কাদের” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে বলে কোনো মন্তব্য করেননি বরং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এছাড়া ওবায়দুল কাদেরও রাষ্ট্রপতির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের ভিডিও যাচাই
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম News24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি “তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যা বললেন নতুন রাষ্ট্রপতি” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিওর সাথে উক্ত দাবিতে প্রচারিত আলোচিত ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও থেকে জানা যায়, সেদিন সাংবাদিক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করা হয়। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যাওয়ার তো আর সুযোগ নেই। তিনি জানান “আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে মনে করি সকলের সংবিধান মানা উচিৎ এবং আমাদের কাছে যে সংবিধানের রূপ আছে, সেখানে নির্বাচনের অধ্যায়ে যা বলা আছে, ঐ ভাবেই নির্বাচন হবে।
অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সেই ভিডিওতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকার পক্ষে তার অবস্থান তুলে ধরেন।
ওবায়দুল কাদেরের ভিডিও যাচাই
অনুসন্ধানে মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম News24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ ফেব্রুয়ারি “সাংবাদিকদের উপর হঠাৎ ক্ষেপে গেলেন ওবায়দুল কাদের” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডির সাথে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল খুজে পাওয়া যায়।
ভিডিও থেকে জানা যায়, ১২ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেসময়ের রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তবে, সেই অনুষ্ঠান থেকে ফেয়ার পথে সাংবাদিকরা ওবায়দুল কাদেরের কাছে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, “আই হ্যাভ টোল্ড এভ্রিথিং এবাউট হিম”।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটির সাথে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের ওপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ক্ষীপ্ত হওয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মূলত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেসময়ের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে গণমাধ্যমে ব্রিফিং এর মাধ্যমে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তবে সেই অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সাংবাদিকরা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আবার প্রশ্ন করলে তিনি রাগান্বিত হন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সংসদে বিল পাশের মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দেওয়া হয়। আমাদের কাছে যে সংবিধানের রূপ আছে সেখানে নির্বাচনের অধ্যায়ে যা বলা আছে ঐ ভাবেই নির্বাচন হবে।’ তবে সম্প্রতি, উক্ত দুই ভিডিও ফুটেজ এর খণ্ডিত অংশ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় জোড়া লাগিয়ে “তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে বললো রাষ্ট্রপতি, ক্ষেপেছে ওবায়দুল কাদের” শীর্ষক ভুয়া দাবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বে ইন্টারনেটে একাধিকবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হলে সেসব বিষয় নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদন গুলো দেখুন-
- বিএনপি’র সমালোচনা করে দেওয়া ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার
- শেখ হাসিনাকে হুমকির প্রতিবাদে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার
সুতরাং, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের ভিন্ন দুই ভিডিওর খণ্ডিত অংশ জোড়া লাগিয়ে রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে বলায় ওবায়দুল কাদের ক্ষেপেছে শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।