সম্প্রতি “বিড়ি খোর।।। সিলেট বন্যা তার ঘর বাড়ী সবকিছু শেষ এর মাঝে ভাই এক প্যাকেট বিড়ি দেন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ত্রাণ হিসেবে ত্রাণ সংগ্রহকারী ব্যক্তির বিড়ি চাওয়ার ঘটনাটি সিলেটের নয় বরং ভিডিওটি ২০২০ সালে ভারতের ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমা থেকে ধারণকৃত।
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, Devdulal Biswas নামের একটি ফেসবুক আইডিতে ২০২০ সালের ২ জুন “ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে এক প্যাকেট বিড়ির আবেদন…গতকাল হাসনাবাদে 😀😀😀” শিরোনামে প্রকাশিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, জনৈক ব্যক্তি ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ফেরার পথে ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলছেন, তিনি ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে এক বান্ডেল বিড়ি হলে ভালো হতো।
পরবর্তীতে একই আইডিতে ২০২০ সালের ১ জুন “হাসনাবাদের বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ প্রদান কর্মসূচি চলছে… ১/৬/২০” শীর্ষক শিরোনামে একটি সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটি ও ত্রাণ হিসেবে বিড়ি চাওয়ার ভিডিওটির মধ্যে স্থানগত মিল পাওয়া যায়। এছাড়া ভিডিওটিতে যারা কথা বলছিলেন, তাদের ভাষার সঙ্গেও পশ্চিম বাংলার ভাষার মিল পাওয়া যায়।
অপরদিকে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম One India Bengali এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৯ এপ্রিলে পূর্ণিমার কোটালে ইছামতি ও বিদ্যাধরী নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২৪ পরগণার বসিরহাট মহাকুমার হাসনাবাদ ও মিনাখা ব্লকে ইছামতী নদীর প্রায় ১০০ ফুট বিদ্যাধরী নদী বাঁধ ভেঙে যায়। যার ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পানি ঢুকে যায়।
আরো পড়ুনঃ সিলেটে ডাকাতির দাবিতে প্রচারিত সিসিটিভি ফুটেজটি মিথ্যা
মূলত, ২০২০ সালের এপ্রিলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণার বসিরহাট মহকুমায় ইছামতী নদীর বাধ ভেঙে যায়৷ এভাবে নদীর বাধ ভেঙে যাওয়ায় সেখানকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পানি ঢুকে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় সেখানকার বন্যা পীড়িত মানুষদের ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এ ত্রাণ নিয়ে ফেরার সময় একজন ত্রাণ সংগ্রহকারীর ত্রাণ হিসেবে বিড়ি চাওয়ার ঘটনায় ধারণকৃত একটি ভিডিওই বর্তমানে সিলেটের বন্যায় ত্রাণ হিসেবে বিড়ি চাওয়ার ভিডিও দাবিতে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের কারণে গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত থেকে ১২ ঘন্টাতেই সুনামগঞ্জে চার ফুট পানি বেড়ে যায়। ফলে বন্যার ভয়াবহতায় দিশেহারা হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জের মানুষ। সুনামগঞ্জ ছাড়াও টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, বিশ্বনাথ, কানাইঘাটসহ সিলেট সদরের ৮০ শতাংশ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির সবশেষ পাওয়া তথ্য মতে, সোমবার (২০ জুন) সকালেও সেখানে ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রোববার দিনে কম বৃষ্টি হলেও আজ বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। তবে গতকালের তুলনায় আজ সিলেটে নদ-নদীর পানি কমেছে। সোমবার সকাল নয়টার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবশেষ তথ্যমতে, সিলেটে সুরমা নদীর পয়েন্টে পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০। সেখানে এখন পানি ১১ দশমিক ৩৫।
সুতরাং, ২০২০ সালের ভারতের হাসনাবাদের বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের সময় জনৈক ব্যক্তির ত্রাণ হিসেবে বিড়ি চাওয়ার ভিডিওকে বর্তমানে সিলেটের বন্যায় ত্রাণ বিতরণের সময়ের ঘটনা দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Devdulal Biswas Facebook: https://www.facebook.com/100007401378183/posts/2562434077346613/
- Devdulal Biswas Facebook: https://www.facebook.com/story.php?story_fbid=2561681157421905&id=100007401378183
- One india bengali: পূর্ণিমার কোটালে ইছামতি ও বিদ্যাধরী নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল
- BBC Bangla: বন্যার ভয়াবহতায় দিশেহারা হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জের মানুষ
- Banglanews24: সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নৌবাহিনী
- Prothom Alo: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি আগের মতোই, তবে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে