পাতিলে থাকা এই শিশুটির পরিবারের সকল সদস্যের মৃত্যুর তথ্যটি মিথ্যা 

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বড় আকৃতির একটি পাতিলের ভেতর রাখা এক শিশুর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ছবিটি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, কুমিল্লার বুড়িচংয়ের খারাতাইয়া এলাকার এই শিশুটির পরিবারের সব সদস্য মারা গেছে। শুধু আধমরা অবস্থায় এই শিশুটি জড়োসড়ো হয়ে আছে একটা পাতিলের মধ্যে।

পাতিলে থাকা এই শিশুটি

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত শিশুটির পরিবারের সকল সদস্যের মৃত্যুর দাবিটি সত্য নয় বরং শিশুটির পরিবার সম্পূর্ণ সুস্থ আছে বলে ছবিটির ফটোগ্রাফার এবং শিশুটির একজন নিকটাত্মীয় রিউমর স্ক্যানার টিমকে নিশ্চিত করেছেন।

অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Nazmul Hasan Topon’ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে গত ২৩ আগস্ট দুপুর ৩ টা ৫৯ মিনিটে প্রকাশিত একই ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ছবিটি তিনি নিজে তুলেছেন। পরবর্তীতে, ২৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে পোস্টের কমেন্টে তিনি জানান, “কেউ গুজবে কান দেবেন না, বাচ্চা ও তার পরিবার সুস্থ আছে। ছবিটা আমার নিজ মোবাইলে আমি নিজে তুলেছি।” তিনি প্রমাণ হিসেবে ছবিটির মেটাডাটাও শেয়ার করেন, যেখানে দেখা যায়, ছবিটি তিনি ২৩ আগস্ট দুপুর ২টা ২৭ মিনিটে তুলেছিলেন।

এই তথ্যগুলো নিশ্চিত করার জন্য, রিউমর স্ক্যানার টিম নাজমুল হাসান তপনের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি জানান, “আমি যখন ছবিটি তুলেছিলাম, তখন শিশুটির মা তার সাথে ছিলেন। ছবির পাশে যে লাগেজটি দেখা যাচ্ছে, সেটির সাথে দাঁড়িয়ে থাকা নারীও শিশুটির পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন। বন্যাকবলিত এলাকায় পানির স্রোত অত্যন্ত প্রবল ছিল, যদিও শিশুটিকে স্পিডবোটের সাহায্যে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার জন্য তাকে একটি পাতিলে রাখা হয়েছিল। ছবিটি তোলার সময় আমি শিশুটির পরিবারের সাথে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাইনি। এটি একটি ছোট ব্রিজের উপর থেকে তোলা হয়েছিল, যেখানে থেকে মানুষদের ট্রাকে করে বুড়িচংয়ের মূল বাজার বা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।”

আরও অনুসন্ধানে, ‘Abdul Hai’ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে একই ছবি সহ একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, “ছবির শিশুটি আমার ভাগ্নির মেয়ে, সম্পর্কে আমার নাতনি। ওরা এতদিন আমার বড় বোনের বাড়িতে ছিল। আজ শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসে। স্রোতের কারণে বড় আপা তাকে একটি পাতিলে করে উঁচু জায়গায় নিয়ে যান। তারপর এক উৎসুক ব্যক্তি এই ছবিটি তোলে। আর বাকি গল্প তো আপনারা জানেন। বাচ্চা এবং তার পুরো পরিবার সুস্থ আছে আলহামদুলিল্লাহ।”
আমরা আব্দুল হাইয়ের সাথেও যোগাযোগ করি। তিনি জানান, ছবির শিশুটির নাম মাশফিকা মাহবুব এবং শিশুটির পরিবার সম্পূর্ণ সুস্থ আছে।

সুতরাং, পাতিলে থাকা আলোচিত শিশুটির পরিবারের সকল সদস্যের মৃত্যুর তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img